মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিংশ শতাব্দী অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী বিশেষত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে, এটি অন্য সকল শতাব্দীর সম্মিলিত অগ্রগতির চেয়েও বেশি। কেবল বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নয় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এ অগ্রযাত্রা অত্যন্ত সফল ও সক্রিয় ছিল। অসংখ্য কবি, শিল্পী, দার্শনিকের কর্ম-কীর্তিতে উজ্জ্বল এ শতবর্ষ। বিংশ শতাব্দী-জাত এ উদ্দাম অগ্রগতি একবিংশ শতাব্দীতে এসে কেবল স্বাভাবিক সচল নয় বরং অশ্ববেগে ছুটছে। অবশ্য এ প্রগতির ফলে যে মানুষের শারীরিক মানসিক দুদিকের উন্নতি এসেছে কিংবা এর ফলে যে সকল মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে তা কিন্তু নয়। আসলে বিশ্বায়ন-ব্যবস্থায় সবকিছুকে পণ্যের উন্মুক্ত বাজারে উপস্থাপন করা হলেও, সে পণ্য আর তৃতীয় বিশ্বের বিপন্ন মানুষের ভোগের বিষয় থাকেনি। দেখা গেছে, যারা নির্দিষ্ট একটি পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তারাও সেটি ভোগ করতে পারছে না। অন্যদিকে যে বিশ্বায়নের অলীক গল্প পাঠ হচ্ছে শ্রেণীকক্ষে, বলা হচ্ছে পৃথিবী একক-দেশ তথা বিশ্বগ্রাম অথচ যোগাযোগের উল্লম্ফন ছাড়া বিশ্বের সকল প্রান্তে উন্নতির ছিঁটেও পড়েনি বরং প্রান্ত থেকে উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে শস্য ও রত্নরাজি। আর দেশে দেশে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তো যুদ্ধ-সংঘাত লেগেই রয়েছে। যুদ্ধ, সংঘাত ও অসমতার হাত থেকে মুক্তি মিলছে না মানুষের। বিংশ একবিংশ শীর্ষক রচনায় এসব কিঞ্চিৎ বিস্তারে তুলে ধরে মোটাদাগে যে কথাটি বলতে চেয়েছি তা হলো: যোগাযোগ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন তো হলো, এখন মানুষের মুক্তির জন্য প্রয়োজন— ভালোবাসা ও মানবতার বিশ্বায়ন। ‘ভালোবাসা সশস্ত্র হলে যুদ্ধ থেকে যায়।’
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্তম্ভ। তিনি বাংলা সাহিত্যের অনেক সৃজন-প্রকরণের প্রবর্তক। তাঁর হাত ধরে বাংলা কবিতা প্রবেশ করেছে আধুনিক যুগে। দগ্ধ-অনুতপ্ত প্রাণের গ্রন্থনা করেছেন তিনি ‘আত্মবিলাপ’ কবিতায় আর এই সংরক্ত কাব্যকথনই আধুনিক বাংলা কবিতার প্রথম স্মারক। দ্বি-শত জন্মবর্ষে মধুকবিকে তাঁর সৃষ্টিকর্মের শোভাকীর্তনে ও জীবন বিলাপের মর্মে একটুখানি স্মরণের চেষ্টা করেছি ‘মধুসূদনের আত্মবিলাপ’ শিরোনামের রচনায়।