তারুণ্যের জয় সর্বত্র। তরুণদের নানান কীর্তি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে প্রত্যক্ষ করেছি। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড সৃষ্টির পেছনে তরুণদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, আত্মত্যাগ, অসম সাহসের বীরগাঁথা আমাদের স্মৃতিতে যেমন উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণদের নেতৃত্ব, সাহস, সহমর্মিতা, সকলকে একসূত্রে গেঁথে রাখার কৌশল আমাদেরকে দিয়েছে নতুন স্বাধীনতা, নতুন নির্দেশনা। আমরা দেখেছি শুধুমাত্র তরুণেরাই নয়, কীভাবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে এবং অসংখ্য ছাত্র, যুবক, শিশুসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি নতুন করে বাকস্বাধীনতা, নতুন বাংলাদেশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এর পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ নিপুণ দক্ষতায় বকুল আশরাফ তুলে এনেছেন তাঁর মেধা, শ্রম ও মমতায়। একইসঙ্গে তিনি নানাসময়ের আন্দোলন, বিপ্লব এবং এর নানা অনুষঙ্গের (নেপোলিয়ান, ভিকটর হিউগো, প্রুধোঁ, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, বদরুদ্দীন উমর) বর্ণনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন এই আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতাকে। এর মাধ্যমেই উঠে এসেছে স্বৈরাচারের নৃশংসতা, বর্বরতা, পৈশাচিকতা এবং নানা ধরনের বয়ান ও মিথ্যার ছলচাতুরি। ‘জুলাই বিপ্লবের কথা গ্রন্থের সাথে সম্পৃক্ত থেকে দেখতে পেয়েছি কীভাবে জনমানসের প্রত্যাশাকে, বাকস্বাধীনতাকে রুখে দিতে, ছাত্রদের যৌক্তিক দাবী ও আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে স্বৈরাচারী শাসক কত ধরনের মিথ্যাচার, প্রতিরোধ, অত্যাচার করেছে। এ বিপ্লবে কতশত নিরীহ ছাত্র (আবু সাইদ, মুগ্ধ, আনাস, ফাহমিন জাফর), শিশু (আহাদ, ইমন, জাবির) ও নানা শ্রেণি ও পেশার (বিশেষভাবে নিম্ন আয়ের মানুষ অকাতরে তাঁদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন। সময় গড়িয়েছে, মৃত্যুর মিছিল বেড়েছে। এরাও তো দিতে পারতো দেশকে সেবা, হতে পারতো নানা কীর্তিতে দীপ্যমান। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তর, নিহতদের আন্দোলনের মাঝে উপস্থিতি, নিপীড়কের অত্যাচারসহ প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলীর ধারাবাহিক তথ্যাদি সংগ্রহ, বর্ণনা করে বকুল আশরাফ যে একটি ঐতিহাসিক আকরগ্রন্থ রচনা করেছেন তা একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে থাকবে এবং অনেকেই এ গ্রন্থ থেকে নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। বর্তমানসহ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ গ্রন্থটি একটি মূল্যবান তথ্যসমৃদ্ধ দলিল হিসেবে থেকে যাবে। আমি এ গ্রন্থের সংকলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি এবং বকুল আশরাফকে জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা।
কবি বকুল আশরাফ বাংলাদেশের সমসাময়িক কবিতার জগতে একটি সুপরিচিত নাম। তিনি একজন কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও সাহিত্য সংগঠক হিসেবে পরিচিত। তার লেখায় আধুনিক কবিতার কাঠামো, ছন্দ ও ভাবনার গভীরতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। তিনি বাংলা কবিতার বিভিন্ন রূপ ও ফর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং তা তার লেখায় প্রয়োগ করেছেন। bwazarakatha.com সাহিত্যকর্ম ও প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ বকুল আশরাফের সাহিত্যকর্ম বহুমাত্রিক। তিনি কবিতা, প্রবন্ধ, শিশু-কিশোর সাহিত্যসহ বিভিন্ন ধারায় লেখালেখি করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: কবিতা দ্রাঘিমা – এই কাব্যগ্রন্থে আধুনিক কবিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে সাহস পাবলিকেশন্স থেকে। কবিতার ফর্ম – এই গ্রন্থে বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের বিভিন্ন কবিতার ফর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে সাহস পাবলিকেশন্স থেকে। rokomari.com ফুলপাখিদের গল্প – শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা এই গল্পগ্রন্থে প্রকৃতি ও কল্পনার মিশেলে রচিত গল্পসমূহ স্থান পেয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে সাহস পাবলিকেশন্স থেকে। অসহিষ্ণু নাগরিক জীবন – এই প্রবন্ধগ্রন্থে সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে পারিজাত প্রকাশনী থেকে। বাংলা কবিতা দিবসে পঠিত কবিতা-২ – এই সংকলনে বাংলা কবিতা দিবসে পাঠিত কবিতাগুলো সংকলিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্যদেশ থেকে। বকুল আশরাফের লেখায় আধুনিকতা, সমাজচেতনা এবং সাহিত্যিক গভীরতা স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। তিনি বাংলা সাহিত্যে তার অবদান দিয়ে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।