গল্প তো বিবর্ণ খড়ে ছাওয়া অভাবী ঘরটির মতো, তার উঠোন, কুয়োতলা। আবিশ্ব দূরে থাক, নিজের উঠোনটিকেও কি চিনে উঠতে পেরেছে কেউ একেবারে? ঘরের সমগ্রতাই ধরা দেয় না চোখে, কখনোই তাকে পুরোটা পাওয়া যায় না। সময়ের নতুন আঁকবাঁক। উঠোনে এমন করে শীতের রোদ পড়ে, পরিত্যক্ত কুয়োয় গেল বৃষ্টির তলানির আঁধারময়তা। যে কুয়োতে এককালে কতোবার দড়ি ছিঁড়ে বালতি ডুবেছে, লোহার কাঁটা ফেলে যেভাবে সে বালতি খুঁজেছে, ধরা দিলে তুলে নিয়েছে উজ্জ্বল মাছের মতো, গল্প তো সেরকমই। সময়ের কাঁটা হারালে কুয়োর অন্তর জলহীন, ফাঁকা, মুখ নামিয়ে হাঁক দিলে ঠিক তারই ঢঙে সেও সাড়া দেবে!
কথাচ্ছলে চলকে ওঠে মানুষী সম্পর্ক। রাজনীতির অন্তঃসারশূন্য, কুটিলতা নিঃশব্দে চারিত হয় পরিচিত বৃত্তেই। বইয়ের গল্পগুলো সময় চিহ্নিত। বিষাদ ও বিমূঢ়তার মহাকাব্য থেকে জল-জঙ্গল-নাগরিক সভ্যতা উথাল পাথাল করে তুলে আনতে চায় অপরিসীম জীবনের মায়া। বিল্পব, আদিবাসী, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আকুল মানব তাদের ছায়া-শরীর নিয়ে খেলে বেড়ায় গল্পগুলির নিভৃত কথকতায়, সাথে মধ্যবিত্তের শঠতা, ভাবালুতা, প্রেম, শরীর ছাড়িয়ে গড়িয়ে নামে তলার দিকে, কায়িক শ্রমজীবনের দিকে, অন্ত্যজের দিকে।
গল্পে উতল মেঘে ছেয়ে থাকে উত্তরের আকাশ। হাজার পাখি একসঙ্গে মৌমাছির ঝাঁকের মতো কালো হয়ে আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে উড়ে যায় আর ফিরে আসে! রেলের কেবিন ঘর, লাল অফিস বিল্ডিংয়ের মাথার ওপর দিয়ে, আকাশের অন্য প্রান্তে হারিয়ে ফের ঘুরে আসে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো সেই ঝাঁকের ওঠানামা। পাঠক বন্ধ মলাটের ভেতর কান পাতলে পাবে অগণন অক্ষরের তুমুল লহরী।
সমুদ্র শহর চট্টগ্রামেই বেড়ে ওঠা। পাঠ্যাভাস সুবাদে ছোটকাল থেকেই লেখালিখি শুরু হয়। অবসর সময় মন ঘুরে বেড়ায় সাহিত্যের খোলা আলো-ঝলমল বারান্দায়। নানান সময় নানান লেখালেখি করেছেন, কিন্তু কথাসাহিত্যে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। জীবন বোধের ঘ্রাণ ভরা কথা লিখে পাঠকের ভালোবাসার কাছে নতজানু হয়ে থাকতে চান তিনি। কেননা পাঠকের ভালোবাসাই তাঁকে লেখার প্রতি দায়বদ্ধ করেছে। সুস্থ সাহিত্য-সংস্কৃতি যাপনের জন্য সম্পাদনা করে যাচ্ছেন ছোটকাগজ ‘সমরেখ’