এমন তো প্রায়ই হয় যে, একটা কোনো প্রসঙ্গ বা ঘটনা মাথায় ঘুরছে, সেই ধারাবাহিকতায় হঠাৎ একটা উপলব্ধি আমাদের মনে-মস্তিষ্কে উঁকি দেয়। ভেতর থেকে কেউ একজন বলে ওঠে—ঠিক! এটাই সত্য!! একটা ‘প্রাণের আরাম মনের আনন্দ আত্মার শান্তি’ অনুভূত হয় সে মুহূর্তে। কমবেশি সবারই হয় বোধকরি এমনটা।
এই সব বোধ আসে, আবার হারিয়েও যায়। কিছু মনে থাকে, অধিকাংশই ভুলে যাই। কদিন পর মনে হয়, কী যেন ছিল কথাটা!
বাইশ বছর আগে (২০০৩) একদিন আচমকা মনে হলো, লিখে রাখি না কেন এই সব অনুভাবনা? অতঃপর শুরু। গেলো ২৩ বছর ধরে দিন-তারিখ উল্লেখ করে লিখে রাখছিলাম কথাগুলো—কখনো গুরুগম্ভীর ভাষায়, কখনো-বা বিদ্রুপাত্মক শব্দে-বাক্যে।
বছর দশেক ধরে গুটিকয় শুভার্থীকে এর কিছু শেয়ার করি হোয়াটসঅ্যাপে—আমার স্বজন-সুহৃদ থেকে শুরু করে সত্তরোর্ধ্ব বর্ষীয়ান শিক্ষকও আছেন সেই তালিকায়। উৎসাহ যোগাতে কি স্নেহবশে জানি না, তারা একরকম প্রশ্রয়ই দেন।
মাঝেমধ্যে ডায়েরি খুলে পড়ি। ভালো লাগে। প্রকাশের ইচ্ছে ছিল না তা নয়, তবে সেটা নিশ্চিতই আরো অনেক পরে। হঠাৎ, জানি না কেন, এই সপ্তাহ দুয়েক আগের এক নিরিবিলি দিনে অজস্র সবুজের মাঝে দাঁড়িয়ে মনে হলো, এ-বছরই প্রকাশ হোক বইটা। তাতে নিজেরও কিছু সুবিধা হয় পড়তে।
তারপর বেশ দ্রুততায়, নির্বাচিত পাঁচ শতাধিক ‘বোধ’ নিয়ে গোছানো হলো খসড়া পাণ্ডুলিপি। দরকারি সংযোজন-বিয়োজন আর বিস্তর কাটাছেঁড়া শেষে প্রকাশ-উপযোগী হয়ে উঠল—বোধ চকিতে পাওয়া উপলব্ধি।
তবে কথা হলো—যা প্রকাশ করতে পেরেছি, তার চেয়ে বেশি পারি নি! সব কি বলা যায়? নাকি বলা সঙ্গত? যা বলতে পারি নি, সে-সব আমারই থাক্।
আরেকটা কথা। বইয়ের ভূমিকায় নানান রকমে-সকমে একে-ওকে ধন্যবাদ দেয়াটাই দস্তুর। যারা দেন তারা উচিৎ কাজটাই করেন নিশ্চয়ই, কিন্তু ব্যাপারটা কেন যেন আমার কাছে আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব মনে হয় বলে এ-পর্যন্ত কখনোই তা করা হয়ে ওঠে নি। কিন্তু এবার একজনকে ধন্যবাদ না দিলে অন্যায় হবে নিশ্চিত—তিনি স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন-এর উদ্যোক্তা ও কর্ণধার জনাব আবু সাঈদ। নিজের বহুবিধ ব্যস্ততা সত্ত্বেও, পাণ্ডুলিপি হাতে পাওয়ার অল্প কদিনের মধ্যেই দারুণ ক্ষিপ্রতা ও দক্ষতায় তিনি যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন। ফলে বইটা দ্রুত ছাপাখানার উদ্দেশে রওনা করতে পারল। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
বইটা প্রকাশিত হলে আরাম করে পড়ব। আমার একান্ত ভাবনাগুলো পড়া যাবে স্পষ্ট ছাপার অক্ষরে। আপাতত এটুকুই শুধু চাওয়া।