কবিতা সাধনায় মতিন বৈরাগীর মূলমন্ত্র সমাজ বদলের ও জনগণের মুক্তির সংগ্রাম। অনেকের মতোই তাঁর চেতনায়ও কবিতার ভাষায় আত্মপ্রকাশের আকুতি জেগেছিল কিশোর বয়েসেই। তবে সে-আকুতি প্রকাশের ভাষা আয়ত্তে আসার পূর্বেই তাঁর পরিচয় হয় জনগণের মুক্তি ও সমাজ বদলের সংগ্রামের বৈজ্ঞানিক মতাদর্শের পতাকাবাহী কর্মীদের সঙ্গে। সেই সূত্রে শুরু হয় তাঁর ওই মতাদর্শ জানার বোঝার অবিরাম অনুশীলন। শ্রেণিভেদ, শোষণ-বঞ্চনা ও পীড়ন, অনাচার-অসঙ্গতি, লোভ-ঘৃণা-ক্রোধ- এইসব সমাজ-বাস্তবতার অভিঘাতে তাঁর কিশোর চেতনায় যেসব স্পষ্ট ও প্রচ্ছন্ন প্রশ্ন জেগেছিল, সে সবের জবাব সন্ধানে শুরু হয় তর্ক ও অধ্যয়ন, আলোচনা ও পুনরালোচনা। একই সঙ্গে চললো যেসব প্রশ্নের জবাব গ্রহণযোগ্য মনে হলো সে সব আর যেসব নিয়ে সংশয় থেকে গেলো তা সব নিয়ে কবিতার ভাষায়- উপমায়-উৎপ্রেক্ষায়-চিত্রকল্পে, কথা ও কাহিনী বর্ণনায় প্রকাশের বিরামহীন চর্চা।
কবিতা-অঙ্গে প্রতিস্থাপিত তাঁর এই মানস-প্রতিচ্ছবি তর্ক ও অধ্যয়ন থেকে খুঁজে পাওয়া এবং জবাব না-পাওয়া প্রশ্ন-বিষয়ে সংশয় আর সেই সাথে সমাজ-বাস্তবতার অভিঘাতে চেতনা বিদীর্ণ করা বেদনাবোধ ও ওই বোধ-সঞ্জাত ঘৃণা-ক্রোধ-ক্ষোভ ও দ্রোহাত্মক উচ্চারণ-কাব্যকলার নান্দনিক শর্ত পূরণ করছে কিনা তা যাচাই করার সুযোগ তিনি পেলেন কবি-লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীদের সংগঠন 'উন্মেষ'-এ যোগ দিয়ে। পেয়ে গেলেন তাঁর কাব্যানুশীলনের পথসঙ্গীদের, যাদের মধ্যে দু-জনের নাম অবশ্যই উল্লেখ্য। একজন অকাল প্রয়াত কবি সমুদ্র গুপ্ত এবং অন্যজন কবি মুনীর সিরাজ। তাঁদের সাথে একত্রে আরো শক্ত মুঠিতে আঁকড়ে ধরলেন মতাদর্শের ও অঙ্গীকারের পতাকা। মতিন বৈরাগীর কাব্যকৃতি অথবা 'উন্মেষ'-এর পরিচর্যায় যারা বেড়ে উঠেছেন তাদের কবিতা অথবা অন্য কোনো কৃতি বোঝার জন্যে ওই মতাদর্শ ও অঙ্গীকারের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। নইলে মতিন বৈরাগী কিংবা 'উন্মেষ'-এর অন্য কারো সৃষ্টি বিচার বা অনুধাবন সম্ভব নয়। আর একথাও স্মরণ রাখা জরুরি যে, মতাদর্শগত দায়বদ্ধতা ও অঙ্গীকারের দাবি 'উন্মেষ' কখনো কারো ওপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেনি-প্রত্যেকেই আপন অনুভব ও উপলব্ধির নির্দেশেই চর্চা চালিয়েছেন। মতিন বৈরাগী এবং অন্যরা 'উন্মেষ'-এ সে পরিচর্যা পেয়েছেন ও অন্যকে দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু প্রত্যাশিত কালের আনুকূল্য ও সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতা তাঁরা পাননি। তা না পেয়ে