স্মৃতিকথা’; অন্যদিকে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন কারণে তিনি রহস্যময় ও মিথিক ব্যক্তিতে পরিণত হন। আবার আবদুর রাজ্জাকের রচনা নেই বললেই চলে। যেমন, আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথোপকথনের আলোকে আহমদ ছফা লিখেছেন যদ্যপি আমার গুরু (১৯৯৮)। রয়েছে হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকার (২০১২) ও জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক স্মারকগ্রন্থ (২০১৫)। হুমায়ুন আজাদ চারজন মনীষীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে আবদুর রাজ্জাক একজন। এ গ্রন্থের ভূমিকাংশে চারজন সম্পর্কে আলাদা ধারণা উপস্থাপন করেছেন হুমায়ুন আজাদ। তিনি আবদুর রাজ্জাক সম্পর্কে বলেছেন, ‘জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক আমাদের এই সময়ের সে—অনন্য পুরুষ, যাঁকে ঘিরে কয়েক দশক ধরে জড়ো হয়েছে নানা রহস্য; পরিণত হয়েছেন যিনি জীবিত উপকথা বা কিংবদন্তিতে। ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর বহুমুখী পাণ্ডিত্যের নানা গল্প, জীবনের অসংখ্য উপাখ্যান। শারীরিক সৌন্দর্যে দেবতুল্য নন তিনি যে তাঁকে দেখেই দর্শক ভক্ত হয়ে উঠবে; বাগ্মীও নন তিনি যে শ্রোতা তাঁর বাণী আস্বাদ করে স্পর্শ পাবে অমৃতের। মোটা মোটা বই লিখেননি অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, অলংকৃত করেননি জ্যোতির্ময় বিভিন্ন আসন; এমনকি নিজের নামের সঙ্গে তিন অক্ষরের একটি উপাধিও যুক্ত করেননি তিনি। তবু তিনিই হয়ে উঠেছেন আমাদের সাম্প্রতিক জ্ঞানজগতের কিংবদন্তি। এর মূলে আছে সম্ভবত দুটি সহজ কিন্তু অসাধারণ কারণ: প্রাচীন ঋষিদের মতোই তিনি নিজের দীর্ঘ ও সমগ্র জীবন ব্যয় করেছেন জ্ঞান আহরণে এবং ঋষিদের মতোই তিনি অবলীলায় অবহেলা করে গেছেন পার্থিব সাফল্য। জ্ঞানের জন্যে এমন তপস্যা—জীবন সংসার, সাফল্যের কথা ভুলে এখন দুর্লভ ব্যাপার; আর তা—ই রূপ লাভ করতে দেখি জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের মধ্যে। শুধুই জ্ঞানের জন্যে সব ত্যাগ করে তিনি হয়ে উঠেছেন এই সময়ের জ্ঞানতাপস।’
মে ১, ১৯২৫- সালের পহেলা মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তাঁরা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে৷ ম্যাট্রিকুলেশন শেষে তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সনে তিনি তার আই.এ. পাঠ সমাপ্ত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে '৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তিতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ১৫ জুন, ২০১৪ তারিখে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়মারা যান৷