এই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা আমাদের একমাত্র প্রভু। তিনি মুহাম্মদ (সাঃ) কে আমাদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। রাসূল (সাঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন করেন। দ্বীন ইসলাম মানুষের জন্য একটি পরিপূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। একজন মুসলিমের প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর অনুশাসন মেনে চলতে হয়।
ইসলাম ধর্মে ঈমান আনার পর একজন মুসলিমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নিয়মিত সালাত আদায় করা। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। সালাত যথাযথভাবে আদায় করলে সে সফল হবে ও মুক্তি পাবে আর যথাযথ আদায় না করলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হবে। নাসাঈ: ৪৬৬, ইবনু মাজাহ: ১৪২৫। লক্ষনীয় বিষয় হলো আমাদের দেশে সালাত আদায়ের নিয়ম-নীতি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, যা ভিন্ন মতানুসারী মাযহাবের ওলামায়ে কিরামের মধ্যে বিশৃঙ্খল অবস্থা ও ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করে। দুঃখজনক হলেও সত্য কখনো কখনো এই ঝগড়া-বিবাদ মারামারি পর্যন্তও পৌঁছায় যা’ মোটেও কাম্য নয়। আলেমদের মাঝে এসকল মতবিরোধের চিহ্নিত কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন হাদিসি দলিল বিদ্যমান থাকা। এই বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে সালফে সালেহীনদের যুগ থেকে। একই বিষয়ে চার মাযহাবের ইমামগণও ভিন্ন ভিন্ন মতামত উপস্থাপন করেছেন। তবে তাদের মধ্যে মতের অমিল থাকলেও মনোমালিন্য ছিল না। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেন, হাদিস বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হলে ওটাই আমার মাযহাব বলে পরিগণিত হবে। ইমাম মালিক বিন আনাস (রহঃ) বলেন, আমার অভিমতের যতটুকু কুরআন ও সুন্নাহর সাথে মিল তা গ্রহণ করো, আর যতটুকু এতদুভয়ের সাথে গরমিল হয় তা পরিত্যাগ করো। ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেন, হাদিস বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়ে গেলে এটাই আমার গৃহীত পন্থা বা মাযহাব। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূলের হাদিস প্রত্যাখ্যান করলো সে ধ্বংসের তীরে উপনীত হলো। যুগ শ্রেষ্ঠ এই মহান চার ইমামের বক্তব্য থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে তাঁরা সকলেই তাঁদেরকে অন্ধ অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। তাঁদের বক্তব্যের মুল বিষয় ছিল একই সুরে গাঁথা অর্থাৎ, কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসই হলো তাঁদের মাযহাব।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তা মান্য করে চল, তাঁকে ছাড়া অন্যদের অভিভাবক মান্য করো না, তোমরা খুব সামান্য উপদেশই গ্রহণ কর” (সূরা আরাফ: ০৩)। “হে মুমিনগণ তোমরা আমার আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর” (সূরা মুহাম্মদ: ৩৩)। “তোমাদের জন্য অবশ্যই উত্তম আদর্শ রয়েছে রাসুল (সাঃ) এর মধ্যে” (সূরা আহযাব: ২১)। সালাত আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন, “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে” (বুখারী: ৬৩১ ; মিশকাত: ৬৮৩)। রাসূল (সাঃ) তাঁর সাহাবীদেরকে সালাত আদায়ের পদ্ধতি হাতে কলমে শিখিয়েছেন, যা পরবর্তীতে হাদিস আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে। কাজেই কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত নির্দেশনা ও শিক্ষা অনুযায়ী সালাত আদায় করতে হবে।
এই পুস্তকে সংকলিত সালাতের বাহিরে ও ভিতরের সকল নিয়ম-নীতি ও পদ্ধতিগত দিকগুলো যতদুর সম্ভব বিতর্ক এড়িয়ে কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আমি যা কিছু লিখেছি যতটুকু লিখেছি তার সবটুকুই আল্লাহ তোমার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য, আমার এই প্রচেষ্টাকে পরকালের নাজাতের ওয়াসিলা হিসেবে কবুল কর।
এই গ্রন্থটিতে মূলত যে সকল উৎস হতে হাদিস সংগ্রহ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো তাওহীদ পাবলিকেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও হাদিস একাডেমী থেকে প্রকাশিত বাংলায় অনূদিত হাদিস গ্রন্থগুলি। সালাতের নিয়ম-কানুম ও পঠিতব্য দোয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলি মূল আরবি ভাষা থেকে বাংলা অনুবাদ উদ্ধৃত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে হাদিসগুলির বিষয়বস্তু এবং ঘটনার পেক্ষাপট জানতে পাঠক সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন। আরবি পড়তে যাদের অসুবিধা হয় কেবলমাত্র তাদের জন্য আরবির সাথে সাথে বাংলা উচ্চারণও অন্তভুক্ত করেছি। তদুপরি বাংলা উচ্চারণের ওপর নির্ভর না করে মূল আরবি উচ্চারণ শিখে নেওয়ার অনুরোধ থাকলো।