কুমিল্লার সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের সম্পর্ক কেবল শারীরিক নয়, মানসিক ও মানবিক; আত্মার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক। বিশ শতকের তৃতীয় দশকে অনেকটা আকস্মিকভাবে কাজী নজরুল ইসলাম কুমিল্লায় এসেছিলেন। এই তীর্থ ভূমিতে কাজী নজরুল ইসলামের আগমন আকস্মিক হলেও অপ্রত্যাশিত ছিলনা। কুমিল্লায় নজরুল খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর পরাণ-সখা, প্রিয়তমাকে। গোমতির তীরে সেই প্রিয়তমাকে হারিয়ে খুঁজেছেন, বারবার ছুটে এসেছিলেন কুমিল্লার মাটিতে। জীবনের একটি পর্বে কুমিল্লাই হয়ে উঠেছিল নজরুলের আশ্রয়, আনন্দ, শুশ্রূষা এবং সৃষ্টিশীলতার এক অনিবার্য স্থান। মনের মানুষকে খুঁজে পাওয়ার পুলক-আনন্দ, দৌলতপুরের প্রেম-পরিণয়-বিবাহদ্বন্দ্ব বিচ্ছেদ-বিরহ বেদনার অভিমান তপ্ত-হৃদয়ের সঞ্চয়নে বহু কবিতা ও গানের জন্ম হয়েছে এ কুমিল্লায়। এখানেই তাঁর বিভিন্ন সভা মিছিলে যোগ দেয়া, সঙ্গীত চর্চা, কবিতা লেখা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে তিনি যাপন করেছিলেন সৃষ্টিশীল, উৎসব মুখর জীবনের একটি বিশেষ পর্ব। দৌলতপুর ও কান্দিরপাড়ে নজরুলের জীবন-নাট্যের যে অংশ সঞ্চয়িত হয়েছে, তা একই সঙ্গে প্রণয়-রঞ্জিত, বিরহ-তাপিত, মধুর-বিধুর।
নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের বিয়ে হয়েছিল কি না, এ নিয়ে জীবনীকারেরা অবশ্য দ্বিধাবিভক্ত। তথ্যপ্রমাণ দিয়ে কেউ বলতে চান, বিয়ের আসরে নানা রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়েছিল। স্ত্রীকে বলেছিলেন, সপরিবার 'শ্রাবণ মাসে' এসে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নিয়ে যাবেন। এরপর ১৭টি বছর পেরিয়ে গেছে, 'শওন আসিল ফিরে সে ফিরে এল না'। জীবনীকারদের একটা অংশ বলতে চান, বিয়েটা আদৌ হয়নি, নজরুলকে ঘরজামাই হিসেবে কুমিল্লায় থেকে যেতে হবে... ইত্যাদি কাবিননামার শর্তে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে বিয়ের আসর থেকে উঠে সেই রাতেই দৌলতপুর থেকে পায়ে হেঁটে কুমিল্লা শহরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। এখানে বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক পর্যালোচনা করে, বিশেষত তৃণমূল পর্যায়ের গবেষকদের মতামত আমলে নিয়ে বর্তমান লেখকও প্রথম পক্ষের অবস্থানকে যুক্তিসংগত মনে করেন। অর্থাৎ নজরুল ও নার্গিসের বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছিল।' (বিশ্বজিৎ চৌধুরী ২০২১, ২৭ আগস্ট, প্রথম আলো) এই তথ্য থেকে কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের একটা অনালোকিত রহস্যর উন্মোচিত হয়েছে।
আহমেদ মাওলা জন্মগ্রহণ করেন ৪ঠা মে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে। বাবা: শফিক আহমেদ, মা: শামসুন নাহার। চার ভাই চার বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। পৈতৃক নিবাস ফেনী দাগনভূঁঞা উপজেলার দেবরামপুর গ্রামে। ছোটবেলার বেশ খানিকটা সময় কেটেছে গ্রামে। কৃতী ছাত্র আহমেদ মাওলা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (১৯৯১) ও স্নাতকোত্তর (১৯৯২), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'বাংলাদেশের উপন্যাসের শৈলীবিচার' শীর্ষক গবেষণার জন্য এম.ফিল (২০০০) এবং 'চল্লিশের কবিতায় সাম্যবাদী চেতনার রূপায়ণ' শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পি.এইচ.ডি (২০০৫) ডিগ্রি লাভ করেন। লেখালেখি শুরু স্কুল জীবন থেকেই। সমকালীন পত্র- পত্রিকায় তাঁর অনেক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। স্বচ্ছ গদ্যভঙ্গি ও চারুতায় দীপ্ত তাঁর লেখা ইতোমধ্যে সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থ-মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য (১৯৯৩), ইমদাদুল হক মিলনের কথাসাহিত্য (১৯৯৩), বাংলাদেশের কথাসাহিত্য: প্রবণতাসমূহ (১৯৯৭), নজরুলের কথাসাহিত্য মনোলোক ও শিল্পরূপ (১৯৯৭), বাংলাদেশের উপন্যাসের সমাজতত্ত্ব (২০০৪), রফিক আজাদ: কবি ও কবিতা (২০০৭), একুশের চেতনা ও বাংলাদেশের সাহিত্যের রূপ রূপান্তর (২০১৪), রবীন্দ্রনাথ: উপন্যাসের মানুষগুলো (২০১৩), মাধ্যমিক বাংলা সহপাঠ (সংকলন ও সম্পাদনা, (২০০৭), বাংলাদেশের উপন্যাসের শৈলীবিচার (২০০৯), মাধ্যমিক বাংলা রচনা সম্ভার (যৌথ) (২০০৯) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বি.সি.এস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিভিন্ন কলেজে কাজ করেছেন। ২০১২ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। স্ত্রী আয়েশা আক্তার স্বপ্না এবং দুই কন্যা নেভরা আহমেদ নির্বাচিতা ও ফাল্গুনী আহমেদ দীপিকা।