মহাকালের, মহাবিশ্বের ও মহাকাশের সব কিছুর স্রষ্টা, উদ্ভাবক, ও নিয়ন্ত্রক মহা পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ মহান আল্লাহ তাআলা। তাঁকে জানার আগ্রহ অনেকের। তিঁনি অদৃশ্য, নিরাকার, মানুষের ধারণাতীত এক মহাসত্তা। বিশ্ব—ব্রহ্মাণ্ডের কোনো কিছুই তাঁর মতো নয়। তিঁনি এক ও অদ্ধিতীয় যার কোন সমকক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী নেই । তাঁর কোনো সৃষ্টির অনুরূপ, প্রতিরূপ, প্রতিবিম্ব বা বিকল্প কিছুই নেই। তাঁর দীপ্তি, তাঁর বিচার—বুদ্ধি, জীবনজ্ঞান ও আচরণ তথা কোনো কিছুই মানুষের মতো নয়। স্ত্রী, পুত্র—কন্যা বা পারিবারিক জীবন কাঠামোতে তিঁনি আবদ্ধ নন। তাঁকে কেউ জন্ম দেয় নাই, তিঁনিও কাউকে জন্ম দেননি। বিশ্ব—সৃষ্টির পূর্বেও তিঁনি ছিলেন, বিশ্ব—বিনাশের পরেও তিঁনি থাকবেন। তিঁনি অনন্ত; তিঁনি অসীম; তিঁনি ক্ষমাশীল, প্রেমময় ও দয়ালু। সময় ও স্থানের গণ্ডিতে তিঁনি আবদ্ধ নন। তাঁর উপস্থিতি সকল কালে, সকল সময়ে ও সকল স্থানে। তিঁনি মহাবিশ্বের, মহাকাশের এবং মহাকালের। তিঁনি মানুষের মেধা—ক্ষমতাভিত্তিক বর্ণনা—ব্যাখ্যার অতীত। আল—কোরআনে তিঁনি বলেছেন, “পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্রযুক্ত হয়ে কালি হয় তবুও তাঁর বাক্যাবলি লিখে শেষ করা যাবে না” (সুরা লোকমান, আয়াতাংশ ২৭ ) তিঁনি অদৃশ্য হলেও বিজ্ঞ বা বুদ্ধি—বিবেক ও চিন্তাশীল মানুষের জন্য তাঁর অস্তিত্বের চিহ্ন, উপমা, প্রমাণও নিদর্শন সুস্পষ্ট ও সন্দেহাতীত । তাঁর ব্যাপ্তি ও তাঁর প্রকৃত অস্তিত্ত্ব মানুষের কল্পনায়, ধারণায় ও বোধ—বৃদ্ধিতে ধারণ করা যায় না । এই গ্রন্থটি কোন ইসলাম ধর্মীয় নেতার বয়ান বা বর্ণনা নয়। এটা একটি গবেষণা গন্থ। বিভিন্ন গবেষণামূলক বিশ্লেষণ, তথ্য, যুক্তিও উপাত্তের ভিত্তিতে মহান আল্লাহ্পাক সম্পর্কে সঞ্জাত ধারণাকে পরিবেশনের চেষ্টা করেছি। যদিও এই গ্রন্থ আল্লাহপাক সম্বন্ধে কোনোমতেই সম্পূর্ণ ধারণা দেয় না, তবুও এই উপলব্ধি বর্তমান যে এটা আল—কুরআনের আলোকে আল্লাহর ধারণা প্রসারে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারে। বিশ্বাসে, কাজে—কর্মে ও আচরণে সৎ, উত্তম কর্মে নিয়োজিত ও পুণ্যে অবগাহিত নির্মল মানুষেরা মরণোত্তর—জীবনে তাঁর দর্শন ও সাক্ষাৎ করতে পারে। ইহজাগতিক জীবনে তিঁনি দৃশ্যমান নন, কিন্তু মৃত্যু—পরবর্তী মানব জীবনে তিঁনি দৃশ্যমান। স্বর্গসুখের সেই মহেন্দ্রক্ষণের আশায় নিবেদিত হউক মহান আল্লাহর প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ ও অবিচল বিশ্বাস, আমাদের আচরণে ও চেতনায় উদ্ভাসিত হোক তাঁর আদেশ—নিষেধ ও নির্দেশ । তাঁর অস্তিত্বে অবিশ্বাসীরা চয়িত তত্ত্ব, কল্পিত সত্তা অথবা বিজ্ঞানকে তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চায় যদিও তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। বিজ্ঞান তাঁর অনুপস্থিতির কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ দিতে পারেনি। প্রমাণের অনুপুস্থিতি তাঁর অস্তিত্বের অনুপুস্থিতির প্রমাণ বহর করে না। ঐশী গ্রন্থ আল—কোরআনের কোনো অংশই অবিশ^াসী বা সংশয়বাদীরা ভুল প্রমাণ করতে পারেনি যা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রশ্নাতীত প্রমাণ বহন করে। আল্লাহর ‘উত্তম সৃষ্টি মানুষের’ জীবন আল্লাহর কোরআনে বর্ণিত নির্দেশমতো শাসিত হবার মাঝে নিহিত আছে চিরশান্তি । এই বার্তা দিয়ে গ্রন্থটি রচনা করেছি। গ্রন্থটি রচনাকালে অনেক গ্রন্থ, গবেষণা পত্র ও পত্র—পত্রিকার সাহায্য নেয়া হয়েছে যা পাদটীকায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ সব লেখক, গবেষক ও অনুবাদকদের কাছে আমি ঋণী। শ্রদ্ধেয় মরহুম মাওলানা মুহিউদ্দীন খান কতৃর্ক বাংলায় অনূদিত “পবিত্র কুরআনুল করিম” গ্রন্থটি হতে আল—কোরআনের বিভিন্ন সুরার বাংলাকৃত আয়াত উধৃত হয়েছে এই গ্রন্থে কোন কোন সময় শুধু সুরার নাম না বলে শুধু সুরা নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর নিকট কৃজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সর্বশেষে, এ গ্রন্থটি রচনা ও প্রকাশের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ্পাকের শোকর করছি।
লেখক ডক্টর মোহাম্মদ জিয়াউল হক নোয়াখালী জেলার সদর থানার নেয়াজপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে ১৯৫০ সালের ১০ই জানুয়ারিতে জন্ম গ্রহণ করেন। নোয়াখালী জিলা স্কুলেরও চৌমহনী কলেজের ছাত্র ড. হক ১৯৭২ ও ১০৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় হতে অর্থিনীতিতে যথাক্রমে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম, বি এ ডিগ্রি ও অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে দুহাজার এক সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এককালে অধুনালুপ্ত বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের প্রকল্প অর্থিনীতিবিদ ও ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ড. হক বিশ্বের কয়েকটি বিশ্ব বিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। এদের মধ্যে অষ্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওমানের সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া সৌদি আরবের আল—কাসিম বিশ্ববিদ্যালয়, ইতালির মিলানের কাটানো বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ডের নারিসুয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভিসিটিং ফেকাল্টি’ হিসেবে স্বল্পকালীন শিক্ষাক্ষতা করেন। ড. হক লন্ডন, প্যারিস, বার্সেলোনা, রোম, ইস্তাম্বুল, দুবাই, কায়রো, কেপ টাউন, কাঠমুন্ডু, বেজিং, সাংহাই, টোকিও, ওসাকা, ব্যাংকক, হংকং, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ম্যানিলা, নিউইয়র্ক, টরন্টো, লাস ভেগাস, কানকুন, ঢাকা, বন ও জেনেভা শহরে একাডেমিক গবেষণা কনফারেন্স সংগঠন ও পরিচালনা করেন এবং বক্তব্য রাখেন। তিনি কয়েকটি গবেষণা—জার্নালের সম্পাদক ছিলেন ও বর্তমানে মেলবোর্নে অবস্থিত গ্লোবাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর বিসনেস একাডেমিকস নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত। তিনি কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা। আল—কোরআনের আলোকে অর্থনীতি, শান্তিধারা, তাত্ত্বিক অর্থনীতি, উন্নয়ন অর্থনীতি ও পরিকল্পনা, নিজেকে দেখি, কোরআন এন্ড প্রফেট—পাথওয়ে টু পিস এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল লোন ডিফল্ট—কেস অফ বাংলাদেশ নামক গ্রন্থসমূহ রচনা করছেন। ড. হক বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিক এবং বর্তমানে তিনি সপরিবারে মেলবোর্ন শহরে বসবাস করছেন।