ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে হেঁটে যাচ্ছিল আনিস। সন্ধ্যা তখন পেরিয়ে রাত নামার অপেক্ষায়। শীতের হালকা আমেজ, বাতাসে এক ধরনের অদ্ভুত নির্জনতা। নীলক্ষেতের দিকে যেতে যেতে আনিসের চোখ পড়লো হাসান মামার পুরনো বইয়ের দোকানের দিকে। এই দোকানটা যেন সময়ের পাতা থেকে উঠে আসা—পুরনো, ধূসর, আর একটা রহস্যময় গন্ধে ভরা।
আনিস বইয়ের প্রতি আলাদা একটা টান অনুভব করত ছোটবেলা থেকেই। বইয়ের পাতায় পাতায় সে খুঁজে বেড়াতো অন্য এক জগৎ, যেখানে বাস্তবতা আর কল্পনার সীমানা মিশে যায়। হাসান মামার দোকানটায় ঢুকে আনিস তাকাতে লাগল ধুলো জমা শেলফের দিকে। হঠাৎ, তার চোখ আটকে গেল একটা অদ্ভুত বইয়ে।
বইটির মলাট ছিল ধূসর, যেন বছরের পর বছর বৃষ্টি আর রোদ মেখে একটা নিজস্ব রূপ নিয়েছে। উপরে বড় হরফে লেখা ছিল— “ ঈযৎড়হড়ং: ঞযব ঠড়রফ ইবুড়হফ”।
“এটা কোথা থেকে এলো, মামা?” আনিস বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল।
হাসান মামা হাসলেন। “মামা, এই বই তুমি দেখছো না। বই-ই তোমাকে খুঁজে নিয়েছে। এটাই নিয়ম।”
আনিস দ্বিধাগ্রস্ত হলেও বইটির প্রতি এক অদ্ভুদ আকর্ষণ অনুভব করছিল। মলাট স্পর্শ করতেই তার সারা শরীরে যেন শীতল এক স্রোত বয়ে গেল। বই খুলতেই প্রথম পাতায় লেখা—
“যদি তুমি জানতে চাও সবকিছুর মর্ম, তবে তৈরি হও ত্যাগের জন্য। কারণ জ্ঞানের পথে চাওয়া মানেই জীবনের সকল পরিচিত সীমা ভেঙে যাওয়া।”
“এইটা পড়বে?” হাসান মামার গলা হঠাৎ যেন ভারী হয়ে উঠল। “বইটা কেউ শেষ করতে পারেনি। সাবধান! এটা খেলনা না।ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নাও।”
আনিস একটু দ্বিধায় পড়লো কিন্তু বইটার প্রতি তার এক ধরনের অদম্য আকর্ষণ কাজ করছিলো। আর এমন-সব অদ্ভুত ব্যাপারে তার বিশ্বাস ছিলো না। সে আর বেশি কিছু না ভেবে চুপচাপ বইটা কিনে নিলো।
রাত তখন গভীর। নিজের মেসে ফিরে আনিস বইটি খুললো। বাতাস যেন হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। আশপাশের সব শব্দ একেবারে থেমে গিয়েছে। আনিস ধীরে ধীরে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে শুরু করলো। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় লেখা ছিল—
নভেম্বরের ২৫ তারিখ, বৃষ্টিভেজা সকালে এক শিশু জন্ম গ্রহন করেন।শিশুর পিতা আলহাজ্ব খন্দকার সিরাজুল হক, কন্যা সন্তানের আশা করেছিলেন কিন্তু সৃষ্টিকর্তা পাঠালেন এক পুত্র সন্তান।সদ্যোজাত সন্তানের নাম রাখলেন খন্দকার আসিফুজ্জামান। স্বপ্ন বুনতে শুরু করলেন সদ্যোজাত পুত্র সন্তানকে চিকিৎসক বানানোর কিন্তু তাঁদের সন্তান কালের চাকার ঘূর্ণনে এখন ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের আইন অনুষদে পড়াশোনা করছে।স্বপ্ন দেখছে সম্মানসূচক ‘ব্যারিস্টার’ ডিগ্রী অর্জনের। লেখক তাঁর পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। সাত বছর বয়সে লেখকের প্রথম কাব্য প্রতিভা প্রকাশিত হয়, যা পরবর্তিতে লেখকের পিতা-মাতার উৎসাহে আরও বিকশিত হয়।লেখক কবিতা, ছোটোগল্প, নাটক, প্রবন্ধ ও উপন্যাস লিখতে পছন্দ করেন। ‘যে কবিতারা এ জগতের নয়’ লেখকের প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ।