শ্রাবণ মাসের ২৬ তারিখ, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ (১৯২২ সালের ১১ আগস্ট) প্রথম প্রকাশিত হয়ে সর্বপ্রথম ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করে নজরুলের ধূমকেতু।
সপ্তাহের দুই দিন শুক্রবার ও মঙ্গলবার, প্রকাশকাল থেকে ভারতবর্ষে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল নজরুল-সম্পাদিত পত্রিকাটি। সম্পাদক হিসেবে নয়, নিজেকে ধূমকেতুর সারথী হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি।
সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। প্রকাশের শত বছর পেরিয়ে গেলেও স্বল্পকাল স্থায়ী এই পত্রিকা ওই সময় অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো আবির্ভুত হয়। অমঙ্গলনাশক হিসেবে সর্বযুগের অসচেতন-অর্ধচেতন মানুষের জন্য পত্রিকাটি অগ্নিসেতু রূপে সংযোগ স্থাপন করেছে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের এবং বর্তমানের সঙ্গে ভবিষ্যতের। প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশবাসীকে স্বাধীনতা ও মানবতার বিপ্লবী ডাকে উজ্জীবিত করা।
ধূমকেতু পত্রিকার ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় দুঃশাসনবিরোধী নজরুলের রাজনৈতিক কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’। ব্রিটিশ মসনদের ভিত কেঁপে ওঠে তখন। বিপ্লবের গণজোয়ারে ঢেউ ছড়িয়ে যায় সমগ্র ভারতবর্ষে। সংখ্যাটি নিষিদ্ধ করা হয়।
২৩ নভেম্বর তাঁর যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থও বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাঁকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারারুদ্ধ অবস্থায় নজরুল আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন যা কেবল জবানবন্দি নয়, সাহিত্যমূল্যেও অনন্য এক নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত।
অভিযুক্ত রাজবিদ্রোহী হিসেবে তিনি বলেন...‘আজ ভারত পরাধীন। তার অধিবাসীবৃন্দ দাস। এটা নির্জলা সত্য। কিন্তু দাসকে দাস বললে, অন্যায়কে অন্যায় বললে এ রাজত্বে তা হবে রাজদ্রোহ। এ তো ন্যায়ের শাসন হতে পারে না। এই যে জোর করে সত্যকে মিথ্যা, অন্যায়কে ন্যায়, দিনকে রাত বলানো―এ কি সত্য সহ্য করতে পারে? এ শাসন কি চিরস্থায়ী হতে পারে? এতদিন হয়েছিল, হয়তো সত্য উদাসীন ছিল বলে। কিন্তু আজ সত্য জেগেছে, তা চক্ষুষ্মান জাগ্রত-আত্মা মাত্রই বিশেষরূপে জানতে পেরেছে। এই অন্যায়-শাসন-ক্লিষ্ট বন্দি সত্যের পীড়িত ক্রন্দন আমার কণ্ঠে ফুটে উঠেছিল বলেই কি আমি রাজদ্রোহী? এ ক্রন্দন কি একা আমার? না―এ আমার কণ্ঠে ঐ উৎপীড়িত নিখিল-নীরব ক্রন্দসীর সম্মিলিত সরব প্রকাশ? আমি জানি, আমার কণ্ঠের ঐ প্রলয়-হুঙ্কার একা আমার নয়, সে যে নিখিল আত্মার যন্ত্রণা-চিৎকার। আমায় ভয় দেখিয়ে মেরে এ ক্রন্দন থামানো যাবে না। হঠাৎ কখন আমার কণ্ঠের এই হারাবাণীই তাদের আরেক জনের কণ্ঠে গর্জন করে উঠবে।’*
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।