‘...চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, সব রকমের সাহিত্য ও শিল্পকলার উৎস কি? মতাদর্শের রূপে যে সাহিত্য ও শিল্পকর্ম সৃষ্টি করা হয় তা হলো মানব মস্তিষ্কে একটি নির্দিষ্ট সমাজের জীবনধারার প্রতিফলনের ফসল। বৈপ্লবিক লেখক ও শিল্পীদের মস্তিষ্কে জনগণের জীবনধারার প্রতিফলনের ফসল হচ্ছে বৈপ্লবিক সাহিত্য ও শিল্পকলা...’ [মাও সে-তুঙ]
জনগণের ওপর শোষণ-নিপীড়ন-নির্যাতন ও তাদের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠনকারী একদল আগ্রাসী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীÑ যারা গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের মোড়কে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে উগ্র জাতীয়তাবাদী রূপ ধারণ করে তারাই মূলত ফ্যাসিবাদী। ইউরোপে উত্থিত বিংশ শতাব্দীর ফ্যাসিবাদ একবিংশ শতাব্দীতে এসে পুনরায় নব্য-ফ্যাসিবাদরূপে আবির্ভূত হয়েছে। কোথাও পাতানো নির্বাচনের গণতন্ত্রের মোড়কে, কোথাও রাজতন্ত্র, আবার কোথাও ধর্মের নামে। ইসরাইল ও ভারতে মৌলবাদী কট্টর ইহুদিবাদ ও হিন্দুত্ববাদের নামে ফ্যাসিবাদ আগ্রাসী রূপে সামনে এসেছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি ভোট ডাকাতি ও জালিয়াতির গণতান্ত্রিক সরকারের মাফিয়াতান্ত্রিক ঘৃণিত একনায়ক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়েছে বটে; তবে জনগণের বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা অধরা ও সুদূরপরাহতই বৈকি!
আদর্শহীন ফ্যাসিবাদের প্রধান শত্রু হচ্ছে সাম্যবাদ। এবং যা কি-না বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথÑ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মার্কসীয় দর্শন। এ ছাড়া মানব মুক্তির দ্বিতীয় কোনো বিকল্প এখনো আবিষ্কার হয়নি।
বজ্রমুষ্টি অঙ্গীকারে আবদ্ধ একমাত্র মার্কসবাদী-লেনিনবাদী কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীরাই তাঁদের লেখা ও চিত্রভাষ্যে গণমানবের মুক্তির কথা বলেন। ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে লড়াকু সেনার ন্যায় নয়া জমানার জন্য সৃজনশীল রচনা সৃষ্টি করেন তাঁরাই। এই গ্রন্থের কবিতাগুলো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের ন্যায়যুদ্ধের ভাষ্যই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে কাব্যিক পঙ্ক্তিমালায়।
কবি ও গবেষক মুস্তাফা মজিদ এর রয়েছে ১০টি কাব্যগ্রন্থ। যথাক্রমে- ‘মেঘবতী সুবর্ণভূমি, “তােকে নিয়ে প্রেম প্রেম খেলা, কুসুমিত পঞ্চদশী’, ‘পুষ্পপত্রে নীলকণ্ঠ’, ‘জনযুদ্ধের কনভয়, ‘সাকিন সুবিদখালী’, ‘স্বাতীর কাছে চিঠি’, Diary of a Nepalese Guerrillas সম্পাদিত কবিতাসমগ্র ঃ মাও সেতুঙ এবং নিবেদিত কবিতা সংকলন ‘প্রাণিত রবীন্দ্রনাথ’ । এই কবি কবিতা লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসরত। মঙ্গোলীয় ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে লােক প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র নিয়েও গবেষণা করে আসছেন। বাংলাদেশের রাখাইন জাতিসত্তার আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক সমীক্ষা নিয়ে অভিসন্দর্ভ রচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। যা বাংলাদেশের রাখাইন’ শিরােনামে বাংলা ভাষায় বাংলা। একাডেমী এবং The Rakhaines শিরােনামে ইংরেজি ভাষায়। ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । ড. মুস্তাফা মজিদের এ পর্যন্ত রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা। ৪০ উর্ধ্ব। তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থের মধ্যে ত্রিপুরা জাতি। পরিচয়’, ‘পটুয়াখালীর রাখাইন উপজাতি', আদিবাসী রাখাইন’, ‘মারমা জাতিসত্তা' বাংলাদেশে মঙ্গোলীয়। আদিবাসী’, ‘গারাে জাতিসত্তহজং জাতিসত্তা’, আদিবাসী সংস্কৃতি (১ম ও ২য় খণ্ড), রূপান্তরের দেশকাল’, ‘সমকালের আত্মকথন’, ‘লােক প্রশাসনের তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ’, ‘বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র', 'রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্র’, ‘নেতৃত্বের স্বরূপ’, বাংলাদেশে বঙ্কিমচন্দ্র’, ‘মুক্ত ও মুগ্ধদৃষ্টির রবীন্দ্র বিতর্ক’ । আর ছােটদের জন্য রচিত ও সম্পাদিত গল্প গ্রন্থ। ‘দীপুর স্বপ্নের অরণি’, ‘জীবন থেকে’ ও ‘ছােটদের ৭টি মঞ্চ নাটক’ এবং জীবনী গ্রন্থ ‘রূপকথার নায়ক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন’ ও ‘বঙ্গবীর ওসমানী। মার্কসীয় মুক্ত চিন্তার যৌক্তিক দৃষ্টবাদে অবিচল মুস্তাফা মজিদ কৈশােরে উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে। অংশগ্রহণসহ কৈশাের থেকেই নানা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। জড়িত । বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ছায়ানট, ঢাকা থিয়েটার ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য। এছাড়াও তিনি সত্তর ও আশির দশকে শিশু-কিশাের। সংগঠন গড়া ও নাট্য আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন । পেশায় প্রথমে সাংবাদিকতা এবং পরে ১৯৮৪ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত আছেন। বর্তমানে মহাব্যবস্থাপক ড. মুস্তাফা মজিদ ১৯৫৫ সালের ১৪ই এপ্রিল পটুয়াখালী জেলার সুবিদখালীতে জন্মগ্রহণ করেন । ভ্রমণ করেছেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানী, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ড।