মায়মুনার পড়ার টেবিলের পাশের জানালা দিয়ে ওর বাবার স্কুলের মাঠের কোনায় দণ্ডায়মান বড় অশথ গাছটি আজ বেশি করে মায়মুনার চোখে পড়ছে। বৃষ্টিতে পাতাগুলো চকচক করছে সন্ধ্যা আলোতে। গাছের লম্বা ঝুরিগুলো মনে হচ্ছে অশথ গাছটির মুখে এক গোছা লম্বা দাড়ি। মনে হচ্ছে যেন শতায়ু কোনো বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে। ঝুরিগুলো এ পাশ ও পাশ দোল খাচ্ছে, সেই মনোরম দৃশ্য দেখে মায়মুনা পড়া থামিয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। লুৎফর কিছুটা অবাক হয়েই বলছে বাবা, দেখো আপা পড়ছে না। মায়মুনা হঠাতেই বাস্তবে ফিরে এসে মুচকি হেসে বলতে লাগল, তোরা সারাদিন দুষ্টামি করিস কিছু হয় না। দাঁড়া, বলে উঠেই দেখে ওর বাবা ও মজিদ মামা বাসার ভিতরে, মাথায় কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির ছাপ।
মায়মুনা পরিপূর্ণ চোখ মেলে তাকালো মজিদের দিকে। মজিদ দেখলো মায়মুনার সেই চোখে নেই কোনো অপরিচিতের দোদুল্যমানতা। সেখানে সে পনেরো বছরের কিশোরী মায়মুনাকেই দেখতে পেল। পকেট থেকে দ্রুত হাতে সে একটা সাদা কাগজের টুকরা মায়মুনারে দিয়ে বলল, এইটা রাখ, রফিক আমাকে দিয়ে বলছে আমি না পড়ে যেন তোরে দেই। আমি সত্য পথের পথিক। কারো সাথে বেইমানি করি নাই। তাই আমি তোর সম্পদের টুকরাখানি তোর হাতেই দিলাম। যত্ন করে পড়িস। যত্ন করে রাখিস।
বাম কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে মজিদ গোলাহাটের মোড়ে রিকশা থেকে নামল। কয়েকজন ছাত্র এগিয়ে এলো। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হচ্ছিল। ছাত্রনেতা মুরাদ এসে যোগ দিল তাদের সাথে। মুরাদের কথা বলে মজিদ যা বুঝতে পেল তা হলো সৈয়দপুর কলেজের প্রিন্সিপ্যাল মতিন হাশমী নাকি বিহারিদের নেতা। ছাত্রদের সারাক্ষণ হুমকির মুখে রাখে এবং সবাইকে উর্দু ভাষায় কথা বলতে চাপ দিতে থাকে। মজিদ ওদেরকে বলল যে বিহারিদের হুমকিতে আতংকিত হওয়া যাবে না। রাত ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। মজিদ চা পান শেষে বাড়ির দিকে রওয়ানা করল।
জেবুন নাহার। জন্ম: স্বাধীনতার বছর ১৯৭১ সাল। বাবা মো. মোখলেছুর রহমান এবং মা মোকসুদা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রী। পরবর্তী সময়ে ফামের্সি অনুষদের ক্লিনিক্যাল ফামের্সি ও ফার্মাকোলজি বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বিভিন্ন ডিজিজের জেনেটিক মিউটেশন ও বায়ো মার্কার ডিটারমিনেশনে তার অনেক রিসার্চ পাবলিকেশন্স আছে। তিনি ইউভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে ফার্মেসি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। স্বামী প্রয়াত প্রফেসর ড. আবুল হাসনাত। দুই পুত্র সাকিব ও সানজিদ।