‘ইন্টারভিউ উইথ হিস্ট্রি’ বইটি ওরিয়ানা ফ্যালাচির একটি অমূল্য রচনা ও বিস্ময়কর সাহিত্যকর্ম, যা ইতিহাসের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ও বিপ্লবী ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাদের জীবনের গভীরে প্রবেশ করেছে। ফ্যালাচি তাঁর অসাধারণ লেখনী এবং সাহসিকতার মাধ্যমে ইতিহাসের বিভিন্ন যুগের নেতৃবৃন্দের মানবিক দিকগুলির পাশাপাশি তাদের আদর্শ, বিপ্লব এবং ক্ষমতার পালাবদলের অন্তরাল ও প্রত্যেক চরিত্রের দুর্বলতাগুলোও উন্মোচন করেছেন। এই বইটি কেবল একটি সাংবাদিকতার কাজ বা একটি সাক্ষাৎকারগ্রন্থ নয়, বইটি ইতিহাসের নানান ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং রাজনৈতিক পরিসরের মধ্যে একটি বাস্তবিক অনুসন্ধানের গভীর বিশ্লেষণের নির্যাস, যা ইতিহাসের প্রতিটি মুহূর্তকে জীবন্ত করে তোলে। লেখিকার ভেতরকার অনুসন্ধানী মনোভাব ও তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নগুলির মাধ্যমে আমাদের সামনে উঠে এসেছে সেইসব মহাপুরুষদের কথা, যাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে তাঁদের ব্যক্তিগত উপলব্ধি, দ্বন্দ্ব এবং উত্থান-পতনের গল্প। অধ্যায়গুলোতে ফ্যালাচি বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাপর রাজনৈতিক নেতা, বিপ্লবী চরিত্র, এমনকি ভিন্ন মতাবলম্বী ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
আমার জীবনের প্রথম অনুবাদ হিসেবে বইটি বাছাই করার কারণ, এটি কেবল ইতিহাসের ছকে বাঁধা কিছু উপাত্ত নয়, বরং প্রতিটি চরিত্রের অন্তর্দৃষ্টি, অনুভুতি ও মনস্তত্ত্বের বহি:প্রকাশ, যা আমাদের প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে সাহায্য করবে এবং আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত চিন্তার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে। গ্রন্থটি শুধুমাত্র ইতিহাস অনুরাগীদের জন্য নয়, বরং যেকোনো পাঠকের জন্য নৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক উপকারিতা প্রদান করবে। বইটি অনুবাদের ক্ষেত্রে আমি ফ্যালাচির ভাষার সৌন্দর্য্য, অর্থের গভীরতা ও প্রতিটি মৌলিক অনুভূতি সঠিকভাবে বাংলায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যার ফলে বইটির মূলভাব বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে আরও সহজবোধ্য এবং অর্থপূর্ণ করে তুলবে। আশাকরি পাঠক যখন বইটি পড়বেন, তারা যেন ফ্যালাচির সঙ্গেই সেই সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করছেন এমন এক অনুভূতি তৈরি হবে। ‘ইন্টারভিউ উইথ হিস্ট্রি’ বইটি আমাদেরকে ইতিহাস, সমাজ এবং রাজনীতি সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করার মাধ্যমে পাঠকের চিন্তাভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। নিঃসন্দেহে এটি পাঠকের মননশীলতার চাহিদা পূর্ণ করার জন্য একটি অপরিহার্য রচনা, যা কেবল ইতিহাসই নয়, মানবিকতার এক নতুন দিগন্তের পথ দেখাবে।
ওরিয়ানা ফাল্লাচি’র জন্ম ফ্লোরেন্সে, বসবাস প্রধানত নিউইয়র্কে। সাহিত্যে সম্মানজনক ডিগ্রি প্রদান উপলক্ষে তাকে লক্ষ্য করে শিকাগাের কলম্বিয়া কলেজের ডিন বলেছিলেন, তিনি “পৃথিবীর অন্যতম বহুলপঠিত এবং বহুল-নন্দিত লেখক।” আমাদের সময়ের প্রধান প্রধান যুদ্ধগুলােতে তিনি যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছেন সেই ভিয়েতনাম থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ১৯৫৬ সালের হাঙ্গেরির বিপ্লব থেকে ১৯৭০’র লাতিন আমেরিকান বিদ্রোহ, ১৯৬৮ সালে মেক্সিকোর গণহত্যা (তিনি নিজে গুরুতর আহত হন তখন) থেকে শুরু করে উপসাগরীয় যুদ্ধ পর্যন্ত, সব সময়ই তিনি ছিলেন। তাঁর বইগুলাে বিশ্বের ত্রিশটি দেশে একুশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আমেরিকান এই সংস্করণটি তিনি নিজেই অনুবাদ করেছেন এবং আমেরিকার জন্য কয়েকটি পৃষ্ঠা বরাদ্দ করেছেন।