নারী এক অদ্ভুত সত্তা মানব পৃথিবীতে। সুন্দরী হলে পুরুষের চোখের বিষ। কালো হলে অন্তবিষের শেষ নেই। হিন্দু বা মুসলমান হলে বিপরীতে থাকে ঘৃণার লোলুপ তরবারী। একাত্তরে, বাংলাদেশে হিন্দু নারীরা ছিল ভাগারের শিল্প, পরিণত করেছিল পাকিস্তানের পবিত্র (!) সেনাবাহিনী এবং এদেশে ওদের সমর্থক কুলাঙ্গার জামাত চক্র। সেই চক্রের চক্রান্তে মহকুমা শহর পিরোজপুরের উপকন্ঠে এক রমণী ‘ভাগীরথী’র জীবনে নেমে এসেছিল তিক্ত সর্বনাশ। না, কেবল সর্বনাশ নয়, জীবনটাও নির্মম পাশবিক খেলায় ও জান্তব যন্ত্রণায় বিসর্জন দিয়েছিল সেই মহিয়সী।
পাকিস্তানি আর্মি আমাদের কন্যা, ভগ্নি, জননীকে পিরোজপুর শহরে গাড়ির পেছনে বেঁধে ইটপাথরের রাস্তার ওপর দিয়ে টেনে টেনে পৈশাচিক উল্লাসে নৃশংস কষ্টে হত্যা করেছিল। কেন হত্যা করেছিল? ভাগীরথীকে ধরে এনে পিরোজপুর সরকারি স্কুলে পাকিস্তানি আর্মির ক্যাম্পে আটকে রেখেছিল। যখন তখন চলত শারীরিক নির্যাতন। এই নরকের মধ্যেও ভাগীরথী ভুলতে পারেনি চার বছরের প্রিয় পুত্র লালশ্যামকে। মায়ের মন। পাকিস্তানি একজন সৈন্যর সঙ্গে বোঝাপড়া করে লালশ্যামকে দেখতে যেত নিজের বাড়িতে। যেতে যেতে পথে যোগাযোগ হতো মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। ভাগীরথীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যামবুশে পাকিস্তানি প্রচুর সৈন্য মারা যায়। ফলাফল : মহান ভাগীরথীর নির্মম মৃত্যুর পরোয়ানা।
কী নৃশংস যন্ত্রণায় ভাগীরথী তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করেছিল, ‘কিংবদন্তির ভাগীরথী’ উপন্যাসে সেই মৃত্যুযন্ত্রণার মর্মভেদী আর্তচিৎকার তুলে ধরবার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনো মৃত্যুকে কী অনুভব করা যায়? আর যদি সেই মৃত্যু হয় জননী জন্মভূমির স্বাধীনতার জন্য প্রবল হায়েনা শত্রুর হাতে, একটু একটু করে, শরীরের মাংস ছিঁড়ে যেতে যেতে, সেই মহান মৃত্যুর কী তুলনা হতে পারে, এই পৃথিবীর কোনো কিছুর সঙ্গে?
আসুন, ‘কিংবদন্তির ভাগীরথী’ পাঠে অনুভবের স্রোতে অন্তত একবার ভাগীরথীকে আলিঙ্গন করি। বলি, আমরা আছি হে সাহসিনী তোমার সঙ্গে, এই বঙ্গে।
জন্ম ১৯৬৮ সালে পহেলা মে [সার্টিফিকেট অনুসারে] বৃহত্তর বরিশালের পিরোজপুর জেলার ভানডারিয়া উপজেলার বোথলা গ্রামে, প্রমত্ত কচানদীর পারে। শৈশব থেকে লেখালেখির শুরু।