প্রতিটি মানুষ একা, কিন্তু এই একাকিত্ব অনেককে থামিয়ে দেয়। গতি চাই তাদের জীবনে। সামাজিকতা আমাদের কখনো কখনো কোণঠাসা করে রাখে আর আমরা লোকে কী বলবে সেই ভয়ে বছরের পর বছর পার করে দেই। খুব অনুরোধ করে কফি খাইয়ে বন্ধুকে নিজের কষ্ট বলতে ভালোবাসি কিন্তু কাউন্সেলিংয়ের জন্য কারও কাছে যাওয়াকে এখনো লজ্জা মনে করি। সব বয়সে মনে হয় আমার তো সময় শেষ। আমাকে দিয়ে আর হবে না, বিশ্বাস করুন এখনো সময় আছে।
একাকিত্বকে রোগ না বানিয়ে জয় করা যায়। সাহস থাকা চাই সবাইকে জানানোর জন্য, হঁ্যা আমি একা। একাকি থেকে সামাজিক হতে চাই আর এই চাওয়াটাই যথেষ্ট। আপনার মনে হচ্ছে আপনাকে কেউ মেনে নিবে না, আপনি পরিবর্তন চান এই ইচ্ছেটুকু যথেষ্ট।
সফল হওয়ার জন্য দিনে ১০০ ইউটিউব ভিডিও কিংবা বাজারের সব মোটিভেশনাল বই পড়া শেষ তবুও কিছু হচ্ছে না। আমিও বলব এভাবে হবে না। কেবল ছোট একটা কাজ করুন। আমাদের দর্শন গুরু সক্রেটিসের একটি কথা মানুন, নিজেকে জানুন।
এই বইয়ে কোনো ম্যাজিক বা সূত্র, কঠিন তত্ত্ব নেই। বইয়ের শেষে কিছু নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার ব্যাপার আছে, তবে সেটা বই শেষ করার পর পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
এই বইটি খুব সহজে সবার জন্য লেখা। আমার কোন টার্গেট গ্রুপ নেই। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন সবার প্রয়োজন। একটা ছয় বছর বয়সী শিশুর যেমন পছন্দের খেলনা না পাওয়ার কষ্ট আছে, তেমনি আমৃত্যু যেকোনো মানুষের কষ্ট আছে। আমরা জয় করতে চাই কিন্তু আমরা পাই ভয়।
আমি একটা থিওরি দিতে চাই সবার জন্য, ইয়ারা থিওরি: ইনভিশন অ্যাকশন রিওয়ার্ড অ্যাসেট (ইয়ারা)
কোনো কিছু অর্জনের জন্য প্রথমে তা কল্পনা করুন। এরপরে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা চাই। সেই অনুযায়ীই হবে অ্যাকশন। কাজ না করে কিন্তু কিছু হয় না। তখন ফলাফল হবে পুরস্কার, এরপরই অর্জিত হবে কাঙ্ক্ষিত সম্পদ।
চলুন নিজেই গড়ি নিজের জীবন। মনে রাখতে হবে নিজেকে ‘ওয়ানম্যান আর্মি’ হিসেবে প্রস্তুত করতে হবে। এই ইয়ারা থিওরি দিয়ে আমি ২০২০ সাল থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে গিয়ে মেয়েদের মোটিভেশন দিয়ে আসছি।
তবে এই বইটি সবার জন্য। তাদের জন্য যারা আসলেই সুন্দর একটা জীবন চায়। আমি সব পাঠকদের অনুরোধ করব বইটির সঙ্গে একটা জার্নি তৈরি করতে। সময় নিয়ে একদিন একটি করে অধ্যায় পড়ুন। নিজের চারপাশের সঙ্গে সংযোগ অনুভব করুন। পেন্সিল দিয়ে মার্ক করা ও নোট রাখতে পারেন।
বইটির সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব হওয়া চাই শুরু থেকেই। সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি কেমন বন্ধু হতে চান। আমাদের জীবনে অনেক কিছুই হয়ে উঠে না কেবল আমাদের পাশে কেউ থাকে না বলে। সেই কাউকে আমাদের অর্জন করতে হয় নিজের যোগ্যতা দিয়ে। আমরা কোনো যোগ্যতার প্রতিযোগিতায় নামছি না। আমরা কেবল দেখছি আমাদের স্বপ্ন পূরণে সত্যিকারের কোন মানুষটি কাছে আছে বা পাশে আছে। সে সব সময় খুব আপনজন হবে তা নয়। আপনি দেখেন চারপাশে আপনার পরিচিতরা খুব সফল কিন্তু আপনি একা বলে পারছেন না। এবার আপনাকে পারতেই হবে। একাই চেষ্টা করুন না।
আর আমি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমার মা, বাবা যারা সবাই মনে করেন আমার বই থাকা উচিত। বিশেষ ধন্যবাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের আমার সকল শিক্ষকবৃন্দ, ড. সর্বাণী গুপ্ত (প্রাক্তন অধ্যাপক নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়া স্টাডিজ, ভারত) এবং কর্মক্ষেত্রের সকল গুরু তাদের কাছে আমি শিখি।
শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি আমার মেন্টর এমিরেটস প্রফেসর প্রয়াত ড. ফাদার ডেভিড বারেলকে। জীবিত থাকলে তিনিই আমার প্রথম বই এ ভূমিকা লিখতেন। আমার লেখার অনুপ্রেরণা প্রয়াত নাট্যকার ড. সেলিম আল দীন।
প্রিয়জন বিয়োগে আমরা হয়ে যাই একাকি। নিজে নিজের প্রয়োজন ও প্রিয়জন হয়ে উঠুন। জীবনে কারো জন্য অপেক্ষা নয়। সময় সব বলে দিবে যদি নিজেকে ভালোবাসার আর্ট জানা থাকে।
বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বটা সারাজীবনের হোক।
সায়মা রহমান তুলি
ঢাকা, বাংলাদেশ
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫