ছড়া লোকসাহিত্যের আদিমতম রচনা। মানুষ যখন থেকে ছন্দ মিলিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে তখন থেকেই ছড়ার সৃষ্টি। শিশুর প্রথম পাঠ হিসেবে তাদের মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে ছড়ার ভূমিকা অপরিসীম। ছড়া কিম্বা কবিতা পড়তে গিয়ে তার কাছে অর্থের প্রাধান্য পায় না। বরং আজগুবি বা আপাতভাবে অর্থহীন শব্দের ব্যবহার তাদের মধ্যে এক ধরনের ধ্বণি ও ছন্দ বোধ জাগ্রত করে। তাই হয়তো যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘খুকুমনির ছড়া’ গ্রন্থের ছড়াগুলি শিশুদের বুঝতে অসুবিধা হয় না। বরং তারা আনন্দের সাথে পড়ে-
হট্টিমা টিম্ টিম্
তারা মাঠে পাড়ে ডিম
তাদের খাড়া দু’টো শিং
তারা হট্টিমা টিম্ টিম্।
শিশু ‘হট্টিমা টিম্ টিম্’ শব্দগুলির অর্থ বোঝে না। ছড়ায় উল্লেখিত এই পাখিটির বাস্তব কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও, এই ছড়া পড়ে সে আনন্দ পায়। শিশু মনের বাসনা উপলব্ধি করে, তাকে শিশুর মনোতোষময় ভাষা শৈলীতে উপস্থাপন করা একজন ছড়াকারের মৌল দায়।
‘মেঘ ছুঁয়েছে ছড়ার ঘুড়ি’ বইটিতে সে দায় পূরণের চেষ্টা করা হয়েছে। সন্নিবেশিত ছড়াগুলিতে বর্ণনা করা হয়েছে শিশু মনের নানা প্রশ্নের উত্তর। বইখানা পাঠের মাধ্যমে শিশুর মনের ভেতর যে প্রশ্নশীল জগৎ থাকে, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার সুযোগ পাবে। বইটি প্রকাশে যাবতীয় সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা দায়িত্ব হিসেবে নিজের মাথা পেতে নিলাম। বইটি শিশুতোষ হলেও সব পাঠকের কাছে ভালো লাগলে সেটি তাঁদের বদান্যতা।
আমার সহধর্মিণী ইয়াসমীন খানমের সার্বিক সহযোগীতা না থাকলে বইখানা হয়তো আলোর মুখ দেখতো না। আরো যাঁদের অনুপ্রেরণায় আমার লেখার কাজ শাণিত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যবর্গ, সহকর্মীবৃন্দ, প্রিয় বন্ধু মোঃ আলী আকবর ফরাজী, মোঃ রফিকুল ইসলাম, সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল নোমান, আলী আশরাফ বিশ্বাস প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। যাঁর কল্যাণে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে, যিনি প্রকাশের দায়িত্ব বহন না করলে এ বইটি তিমিরেই থেকে যেত, সাহিত্যানুরাগী প্রকাশক ‘কারুবাক’-এর স্বত্ত্বাধিকারী গোলাম কিবরিয়া কে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
পাঠক সমাজে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস সমাদৃত হলে আমার লেখনীতে যোগ হবে ভিন্ন মাত্রা, পাবো ভবিষ্যতে আরো ব্যতিক্রম সৃষ্টির অনুপ্রেরণা।