এক
অপারেশন গোল্ডেন ট্রফি
ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস শুরু হবে কিছুক্ষণের মধ্যে। সবাই এসে বসেছে শ্রেণিকক্ষে। মমিন ওরফে মন্টু বসলো কোনার দিকে। রহিম বসেছে সামনে। বেলাল ওরফে বল্টু আর দোলন অভ্যাস মতো পিছনে বসে কথা বলছে। এমন সময় জালাল স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। স্যারের প্রথম কাজ হলো ক্লাসে এসে হুংকার দিয়ে ইংরেজি হোমওয়ার্ক খাতা দেখা। যারা হোমওয়ার্ক করেনি তাদের বেঞ্চের উপর কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা। তারপর নতুন পড়া দেওয়া। আজ স্যার খুব হাসি মুখে ক্লাসে ঢুকলেন। তার চেয়েও অদ্ভুত ব্যাপার স্কুলের হেডস্যার আফজাল স্যারও সাথে এসেছেন। তিনিও হাসিখুশি মেজাজে আছেন। স্কুলের দপ্তরি হাসানের হাতে বড়ো কোনো কিছুর প্যাকেট। রহিম ঘ্রাণ নিয়েই বুঝে গেল জিনিসটা কী। আমাকে কানে কানে বলল, “দপ্তরির হাতে মিষ্টির প্যাকেট।”
আমরা সবাই উদ্গ্রীব হয়ে বসে আছি। তবে হেডস্যার কেন এসছেন তা জানতে নয়, বরং স্যারের আনা মিষ্টি খেতে। হেডস্যার বলতে লাগলেন, “তোমাদের জন্য খুশির খবর আছে! এবছর আমরা দুই লক্ষ টাকা পেয়েছি সরকার থেকে। খুব শীঘ্রই তোমাদের ক্লাসে নতুন বোর্ড লাগানো হবে আর নতুন কিছু বসার বেঞ্চ ও টেবিল দেওয়া হবে। পাশাপাশি রুমটি রং করে সাজানো হবে।” “তোমরা কি আরো কিছু চাও?” স্যার জিজ্ঞাসা করে জালাল স্যারের দিকে তাকালেন এবং তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
থার্ড বেঞ্চের কোনার দিকে বসা মন্টু বলল, “এই খুশির দিনে বনভোজন আয়োজনের ঘোষণা দিলে কেমন হয়, স্যার?” হেডস্যার বললেন, “খুব ভালো প্রস্তাব।” “তবে আগে বলো সবাই কেন পিকনিককে বনভোজন বলে?” জিজ্ঞেস করলেন হেডস্যার। শেষের বেঞ্চের দোলন বলল, “স্যার, বনে গিয়ে ভোজন করে সেজন্য।” হেডস্যার দোলনের কথায় হেসে দিলেন। জালাল স্যার হাসবেন না গম্ভীর থাকবেন ঠিক বুঝতে পারলেন না। ক্লাসের সবাই হাসছে দেখে শেষ পর্যন্ত তিনিও হেসে দিলেন।
হেডস্যার যখন রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বল্টু আমতা আমতা করে বলল, “স্যার, মিষ্টির কী হবে?” স্যার ঘুরে দাঁড়িয়ে বল্টুর কান আলতো করে মলে দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, “পেটুক কোথাকার! পড়া মনে থাকে না কিন্তু মিষ্টির কথা ঠিকই মনে থাকে।” ক্লাসের সবাই হেসে উঠলো। স্যার দপ্তরি হাসানকে বললেন, “এই পেটুকগুলোকে যত পারিস মিষ্টি খাওয়া।” কিছু ফাইল ওয়ার্ক করতে হবে বলে স্যার অফিস রুমের দিকে হাঁটা দিলেন। হেডস্যার চলে যেতেই আমরা মিষ্টি খাওয়া শুরু করলাম।
২.
ফেব্রুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে বনভোজনের দিন-তারিখ ঠিক হলো। স্কুলের পার্শ্ববর্তী একটি বনে হবে বনভোজন। চাঁদা ধরা হলো জনপ্রতি তিনশত টাকা। বনভোজন আয়োজনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হলো জালাল স্যারের ওপর। সকল কাজ ঠিকঠাক এগোচ্ছিল। কিন্তু বনভোজনের দুই দিন আগে অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটে গেল।
আমরা সবাই ক্লাসে ছিলাম। বিজ্ঞান পড়াচ্ছিলেন সাগর স্যার। এমন সময় হেডস্যার প্রায় দৌড়ে ক্লাসে ঢুকলেন। এসেই বললেন, “চুরি হয়ে গেছে!” আমরা সবাই একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলাম। সাগর স্যার হেডস্যারকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী চুরি হয়েছে, স্যার?” স্যার বললেন, “গোল্ডেন ট্রফিটা চুরি হয়ে গেছে।”
স্কুল যে বছর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই বছর জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের জুনিয়র ক্যাটাগরিতে স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রদের একটি দলকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল অংশগ্রহণের জন্য। হেডস্যারের চেষ্টায় আশপাশের অনেক স্কুলের ভালো ভালো ছাত্ররা আমাদের নতুন স্কুলটিতে ভর্তি হয়েছিল। তাই স্কুলের টিমটি ছিল অত্যন্ত ভালো একটি টিম। সবাইকে অবাক করে দিয়ে স্কুলের টিমটি চ্যাম্পিয়ন হয়ে গোল্ড ট্রফি জিতে নেয়। পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে এই খবর প্রচারিত হলে চারিদিকে স্কুলের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।