‘আগামীদিনের চলচ্চিত্র আমার কাছে মনে হয় আরো ব্যক্তিগত হবে, স্বতন্ত্র বা আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসের চেয়েও, সেটা হবে অনেকটা পাপস্বীকার বা দিনলিপির মত।’ ফ্রাসোঁয়া ত্রুফোর এই ভবিষদ্বাণী আজ অনেকাংশেই সত্যি। তরুণরা মোবাইল ফোনের ক্যামেরা হাতেই তৈরি করে ফেলছেন চলচ্চিত্র, হাজির করছেন ব্যক্তিগত বয়ান। ত্রুফোর পক্ষে এভাবে ভবিষ্যৎ দেখতে পারার পেছনে কারণটা ছিল তিনি চলচ্চিত্রের শক্তিমত্তাকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন কৈশোর বয়সেই। প্রচুর চলচ্চিত্র দেখা ও পরবর্তীকালে চলচ্চিত্র নিয়ে লেখালেখি করার দৌলতে বোঝাপড়ার ভিতটা তৈরি হয়েছিল পোক্তভাবেই। তার উপর ভর করে তিনি যখন নির্মাণে আত্মনিয়োগ করলেন তখন বিশ্ববাসী নতুন কিছু দেখতে পেলেন বড়পর্দায়, যা তাদের অভিজ্ঞতায় ছিল অভিনব ঘটনা।
ত্রুফোর মতো প্রতিভাবান মাস্টার ফিল্মমেকারকে পুরোপুরি বুঝে ওঠা কঠিন, তবে চেষ্টা করতে দোষ নেই। ত্রুফোর জীবন, সময়ের উপলব্ধি, নিজের চলচ্চিত্রকর্ম ও সমসাময়িক কিংবদন্তিদের সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা নিয়ে সংকলিত এই বই সেই চেষ্টাই করেছে। ত্রুফো অনেক চলচ্চিত্র পরিচালক ও তাদের কাজ নিয়ে লিখেছেন। তবে আমার বিবেচনায় তার সময়ে শুধু নয়, সর্বকালের অবিসংবাদিত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যারা, যাদের নাম দেশ ও কালের সীমানা অতিক্রম করে অমরত্ব লাভ করে বসে আছে, তাদের নিয়ে ত্রুফোর কিছু ভাবনার অনুবাদ এই বইতে স্থান দিয়েছি: চ্যাপলিন, হিচকক, বারিম্যান ও গদার। তবে যারা বাদ পড়লেন তারাও কম গুরুত্বপূর্ণ নন। যেমন ফেলিনি, বুনুয়েল, ব্রেসোঁ, রসেলিনি, ওয়েলস প্রমুখদের নিয়েও লিখেছেন ত্রুফো। সকল লেখা এখানে তুলে ধরার অবকাশ কম। তুলে ধরা যে গেল না, সে দায় আমার।
ত্রুফোর প্রথম জীবনের কর্মস্থল কাইয়ে দ্যু সিনেমা ও ফরাসি নয়া ঢেউ নিয়ে সর্বশেষ দুটি সংযোজন আশা করি সামগ্রিকভাবে ত্রুফোকে বুঝতে সাহায্য করবে। এই বই একদিকে যেমন বাঙালি পাঠকের কাছে ত্রুফোকে সংক্ষেপে তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রয়াস, অপরদিকে ত্রুফোর সৃষ্টির প্রতি আমার ভালোবাসা ও অভিবাদন জানানোর আন্তরিক প্রচেষ্টাও বটে।
বিধান রিবেরু জন্ম ২২ সেপ্টেম্বর, ঢাকা। টেলিভিশন চ্যানেলে ভৃত্যের জীবনযাপন করছেন। তবে স্বপ্ন দেখেন অন্যজীবনের। চলচ্চিত্র ও বই পাঠ করতে ভালবাসেন। চিন্তার জগতে শূন্যস্থান পূরণের তাগিদ থেকে লেখেন। ২০১১ সালে প্রকাশিত চলচ্চিত্র পাঠ সহায়িকা বিধান রিবেরুর প্রথম প্রবন্ধের বই।