এই সংকলনটির সূচনা সেই সব গল্পকারদের নিয়ে যাঁদের জন্ম স্বাধীনতার বছরে বা তার কাছাকাছি সময়ে। নতুন দেশের স্বপ্ন বোনার পাশাপাশি এঁরা দেখেছিলেন ছয়ের দশক থেকে খাদ্য সংকট, বেকারত্ব, কালোবাজারি এবং মানুষের জমতে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সাতের দশকে রাজ্য, রাষ্ট্র ও সমাজ-জীবনে উথালপাথাল শুরু হল। বাংলা গল্প ঘর-দোর ছেড়ে রাস্তায় নামল আর দ্রুত বদলে যেতে থাকল গল্পের ভাব, ভাষা ও শৈলী। এই সংকলনের প্রথম আটত্রিশটি গল্পের মধ্যে তার স্পষ্ট ছাপ আছে।
নয়ের দশকে বাংলা গল্পে নতুন এক পর্যায়ের শুরু। গ্রামে চাষের হাল ও গোরুর পরিবর্তে ট্রাক্টর আর কাস্তের পরিবর্তে ধান কাটার মেশিন ঢুকছে। অন্যদিকে কলকাতা ও অন্যান্য নগরী বিস্তার পাচ্ছে। জমির দালাল, মস্তান আর বালি ও ইট জোগানের লোকজন দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। মারামারি ও খুনখারাপি মাঝেমধ্যেই ঘটছে। দেশে-বিদেশে সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বাড়ছে। ওদিকে বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চে পূর্ব ইউরোপের রাজনৈতিক কাঠামো ভাঙছে আর আমেরিকা ও ইউরোপে বিশ্বায়নের ঝড় উঠছে। সমাজ ও রাজনীতির এই নতুন জাত ও ধাতে বাংলা গল্প ভিন্ন এক ধারায় প্রবাহিত হল একদল নতুন গল্পকারের হাতে।
একুশ শতকের প্রথম পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে বাংলা গল্পে আর-এক বাঁকবদল ঘটে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রান্তবাসিনী নারীরা তাদের ইচ্ছে ও অধিকারগুলোকে স্পষ্ট করে তুলছে। শপিং মল বদলে দিচ্ছে বাঙালির সামাজিক জীবন আর দোকানের পোশাক থেকে তৈরি খাবার হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ছে ঘরে। সেল্স-এর কর্মীদের অবস্থা ভীষণ রকম অনিশ্চিত। সফ্টওয়্যার কর্মসংস্কৃতির যুগে জীবন ও জীবিকার অন্য এক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। দিনের অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে কম্পিউটারের সামনে। কোভিড হাজির হয়েছে মৃত্যু পরোয়ানা। নিয়ে। এ-সবই নতুন এক গল্পধারা এবং নবীন একদল গল্পকারকে সামনে এনে দিল।
একশো তিন জন বিশিষ্ট গল্পকারের গল্প নিয়ে এই সংকলন। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অসম ও ত্রিপুরার কথাকারদেরও গল্প আছে এখানে। স্বাধীনতা-উত্তর বাঙালি জীবনের তিনটি পর্বের অন্তরঙ্গ ছবি এবং তার কথাভাষ্য মিলবে এই বইটিতে।