মা-মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি গভীর দরদবোধ নিয়ে লেখা ‘হৃদয়ে আছে আগুন’ কাব্যগ্রন্থটি কবির কর্পূরের মতো জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। কোনো দিবসের কথা নয়, প্রতিদিনের লড়াইয়ের কথাই এঁকেছেন কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে। দেশ ও জাতির মুক্তির আকাক্সক্ষায় কবি ডুবেছেন গভীর বিষাদে, গিয়েছেন যুদ্ধে। কিন্তু পতাকার পরিবর্তন মানেই তো মুক্তি নয়। স্বপ্নকানন মারিয়ে দানবীয় এক জাঁতাকলে অর্ধশতাব্দী ধরে পিষ্ট হতে থাকে কাননের সকল ফুল, সকল মালি; হৃষ্ট হতে থাকে একদল বুনো শুয়োর। বেড়েছে জিডিপি, হয়েছে উন্নয়ন, উঠেছে ভবন, চলেছে জয়গান; কিন্তু মেলেনি শুধু মুক্তি। তাই তো পাঁজরে জমেছে বারুদ, উঠছে ধোঁয়া, বয়েছে অসাম্যের অগ্নি দগ্ধানি। এ দগ্ধানি থেকে মুক্তি পেতে কবি পথ খুঁজলেন কবিতার পঙক্তিতে। হৃদয় নিসৃত অনুভূতিগুলো আশ্রয় পেলো কবিতায়। তিনি দেখেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে রক্তাক্ত আলপনা। দেখেছেন, মিউজিক্যাল চেয়ার খেলার মতো চেয়ার দখল। মগড়া-বালই-ধনুর মতো অসংখ্য নদী দখল হয়ে যাচ্ছে, হাওর-বাওর, পাহাড়-অরণ্য খেকোদের নিশ্বাসে বিষাক্ত আজ আকাশ-বাতাস। এসবই কবিকে যন্ত্রণা দেয়, প্যালেস্টাইনের শিশুদের আর্তচিৎকার কবিকে আহত করে। ক্রুশবিদ্ধ অসংখ্য মানুষ চারপাশে বেদনাহত করে তাঁকে।
পাথরের শক্ত হৃদয়ে সুপ্ত থাকে আগুন। যখনই একটির সাথে আরেকটি পাথরের ঠোকাঠুকি হয়, জ্বলে ওঠে আগুন। তেমনি হৃদয়ে মুঠো মুঠো আগুন ছড়ানো মানুষগুলোর মধ্যেও শীঘ্রই ঠোকাঠুকি হবে এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত হয়েছে কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে। টরেটক্কা মিথ্যে বোলে আর তিনি ভুলতে চান না, তিনি প্রতীক্ষায় থাকেন হাতুড়ির আঘাত হানতে হানতে কোনো এক অমোঘ শক্তি আসুক, কিছু একটা হোক...