আজ সোহেলীর বিয়ে। সে বাড়িতে নাই। সে জানেও না। জানানোর দরকারও নেই। মেয়ে মানুষের আবার মতামত কি। যেকোনো সময় যেকোনো পরিবেশে তারা ফিট। যেকোনো বয়সের লোকের সাথে তারা মানানসই। তারা যেন গাড়ির সাথে জুড়ে দেওয়া ঘোড়া। তাদের গাড়ির সাথে জুড়ে দিলেই গাড়ি টানতে থাকবে। বিয়ের আলোচনা চলছে তার-ই বাড়িতে। বিয়ের কোনো প্রস্তুতিও ছিল না।
এভাবেই বিয়ে হয়ে গেল সোহেলীর আনোয়ারের সাথে। আনোয়ার তার সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে বিক্রি করে দিলো মফিজের কাছে। মেয়েদের নিয়েই মফিজের রমরমা ব্যবসা। সেখানে সোহেলীর ভাগ্য আশা নিরাশায় দুলতে থাকে সর্বদা। তবুও স্বপ্ন দেখা সে থামায়নি।
একদিন সত্যি সত্যি তার ভাগ্য খুলে যায়। সেলিম তাকে স্বর্ণালী সময় উপহার দেয়। কেমন ছিল সে জীবন? এসব জানতে পাঠককে বইয়ের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সোহেলীর জীবনের এক টুকরো ছবিতে আমরা দেখতে পাই!
সমুদ্রের বেলাভূমিতে সোহেলী আর্টিস্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একগুচ্ছ রজনিগন্ধা হাতের মুঠে ধরা। হাতটা ভাঁজ করা। রজনীগন্ধার স্টিকগুলো তার বুক বরাবর একটু আড়াআড়ি ভাবে আলতো করে রাখা। তার চোখ সমুদ্রের দিকে তাকানো। ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সে আসলে সমুদ্রকে দেখছে না। ঐ চোখে কিছু খুঁজছে। পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে আছে যেন অসীম সময় ধরে।
আর্টিস্ট দ্রুত তার স্কেচ নেওয়া শুরু করেছে। ফটফট করে শব্দ হচ্ছে। একটার পর একটা পেনসিলের শিষ ভাঙ্গছে।
স্কেচ নেওয়া শেষ হলে সোহেলী সেলিমের কাছে এগিয়ে এসে একটা হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। তার বুকে মাথা রাখে। রজনিগন্ধাটা নাকের কাছে তুলে ধরে। গন্ধটা সুন্দর না? তাকে জিজ্ঞাসা করে। উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার বলে, ‘আমি যখন থাকব না। ঐ ছবিটার কাছে গেলে তুমি এরকম গন্ধ পাবে। তখন বুঝে নেবে আমি তোমার পাশেই আছি’।
কথা শুনে সেলিমের বুক হুহু করে ওঠে। মনটা ভারী হয়ে যায়। সোহেলী কে বাঁচাতে হবে। তাকে মরতে দেবে না। প্রয়োজনে সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে সোহেলীর চিকিৎসা করাবে। শেষ পর্যন্ত সোহেলীর কি হলো?