এই বইয়ে পাঁচটি গল্প স্থান পেয়েছে। প্রথম গল্পটা লিজনকে কেন্দ্র করে। প্রতি গল্পের বইয়ে লিজন আর রেনুকে নিয়ে একটা করে গল্প লেখার চেষ্টা করি। লিজন চরিত্রটা আমার কাছে ভালো লাগে। এই বইয়ের গল্পে টুকরাংশ……..।
লিজন একটা টুল নিয়ে রেনুর বেডের কাছে বসে। রেনুর দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক। কতহাসিখুশি ছিল মুখটা, সেই মুখটারএ কিঅবস্থা। কপাল পেঁচিয়ে ব্যান্ডেজ বাধা। ডান গালের উপর ছোট একটা টেপ মারা। লিজনের তাকিয়ে থাকতে থাকতে রেনুর চোখ খুলে যায়। তাকে খুব করুন দেখায়।
রেনু বলে, বাম পায়ের অবস্থা খুব খারাপ। পচন ধরলে কেটে ফেলাও হতে পারে। পঙ্গু মেয়েকে কে ভালোবাসবে! ভাগ্যে যা আছে সেটাই তো হবে, না! আপনাকে আর বিরক্ত করতে চাই না। আগে আপনাকে অনেক বিরক্ত করেছি। যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন ক্ষমা করে দেবেন। মোবাইলটা গাড়ির চাকার নিচে পড়ে ভেঙ্গে গেছে। এখন আমার কোনো মোবাইলও নেই। যতদিন হাসপাতালে আছি মোবাইল রাখতেও চাই না। আমার সাথে কারও কোনো যোগাযোগের দরকার নেই। তারপর চাদর সরিয়ে বাম পা দেখায় লিজনকে। বিশাল এক রডের খাঁচার সাথে ব্যান্ডেজ বাঁধা।
লিজন রেনুকে জিজ্ঞাসা করে, কেমন করে হলো এসব।
রেনু বলে, আপনার জন্য একমুঠো সুন্দর গোলাপ কিনেছিলাম। দেরি হয়ে গিয়েছিল, তাড়াহুড়ার মধ্যে ছিলাম। রাস্তা পার হতে গিয়ে হঠাৎ সব ওলট পালট হয়ে গেল। গোলাপের তোড়াটা খুব যত্ন করে ধরে ছিলাম আপনাকে দেব বলে। তার কিছুই হলো না। জীবনের একটা সাধ অপূর্ণই থেকে গেল। তারপর রেনুর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে।
এই অশ্রু লিজনের কাছে অসহ্য মনে হতে থাকে। সে রেনুর কাছ থেকে উঠে দাঁড়ায়। হাসপাতালের কেবিন থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়। রেনুর দিকে একবার তাকায় না পর্যন্ত। যারা বীর পুরুষ তার কখনও প্রিয়তমার চোখে অশ্রু দেখতে পারে না। কাপুরুষরাই কেবল নারীদের নির্যাতন করে। নারীর চোখে অশ্রুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রেনু কথা বলতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। টুলের দিকে তাকিয়ে দেখে লিজন নাই, চলে গিয়েছে। সে ভাবে, ভালোই হলো। যে থাকতে চায় না তাকে ধরে রাখার জন্য জোর না করাই ভালো। যে চলে যেতে চায়, তাকে যেতে দিতেই হয়। ভুলিয়ে ভালিয়ে কতক্ষণ আর আটকে রাখা যায়।