যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহ তায়ালার, যিনি রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গোটা মানব জাতির জন্য আদর্শ শিক্ষক ও মুক্তির দূত হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর মধ্যেই রেখে দিয়েছেন উত্তম আদর্শ। এ মর্মে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন-لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِنْ رَسُوْلِ اللَّهِ أَسْوَةٌ حَسَنَةٌ অর্থাৎ, নিশ্চয় তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব-২১)
মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরাণী আদর্শ ও তাঁর সুন্নাতের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ ব্যতীত কারো পক্ষেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়; চাই সে যে পেশার, যে শ্রেণীর, যে বয়সের ও যে সংগঠনের লোকই হোক না কেন।
আর কারো পক্ষে তখনই নববী আদর্শের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করা সম্ভব, যখন সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তেষট্টি বছরের যিন্দেগীর পবিত্র সীরাত বারবার পড়বে, শুনবে ও তা নিয়ে ফিকির-গবেষণা করবে। আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশের অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য একজন লেখক, আমার একান্ত স্নেহধন্য মুফতি মুহাম্মাদ আবদুর রহমান আজাদ "সীরাতভিত্তিক জুমার বয়ান" নামক একটি কিতাব সম্পাদনা করেছে। কিতাবটি সংকলন করেছেন সৈয়দপুর জামি'আ এমদাদিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস, বহু গ্রন্থ প্রণেতা মুফতী আতিকুল ইসলাম।
আশা করি কিতাবটি অধ্যয়ন করে আলেম-গাইরে আলেম সকলেই উপকৃত হতে পারবে। দুআ করি, আল্লাহ যেন একে সমস্ত উম্মতের হেদায়াতের জরিয়া বানিয়ে দেন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে পরকালে নাজাত দান করেন। আমীন
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।