সেহরা সাবেরিন। বিমান বাহিনী একাডেমিতে প্রশিক্ষণার্থী এই নামের একজন তরুণীর জবানীতে মঈন আহমেদ আত্মকথনের মাধ্যমে লিখেছেন- নিঃশব্দ জ্যোৎস্নার ভিতর।
উপন্যাসটিতে একজন তরুণীর দৃঢ়চেতা মনোভাবের সাথে তার জীবনসংগ্রাম, স্রোতে গা ভাসানো জীবনের বিপরীতে আদর্শকে ধারণ এবং লালনের মতো ব্যাপারগুলোকে সে আত্মপ্রত্যয়ের সাথে চর্চা করতে আগ্রহী। এই উপন্যাসে আমরা সেহরা নামের সংগ্রামী এক তরুণীকে পাই যে বাবা-মায়ের অনুরোধ-নিষেধ সত্ত্বেও দেশ-মাতৃকার সেবার ব্রত এবং বিমান চালানোর স্বপ্ন নিয়ে বিমান বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করে।
উপন্যাসের প্রথম দৃশ্যেই আমরা সংরক্ষিত এলাকার ভিতর, প্রায় অন্তমিত বিকেলে এক পাহাড়ে বয়সি এবং ধ্যানমগ্ন একজন প্রৌঢ়কে পাই। সাবেরিন ঋষির মতো মানুষটাকে পাহাড়-প্রকৃতির দিকে মগ্ন হয়ে থাকতে দেখে আগ্রহভরে তাঁর দিকে এগিয়ে যায়। চোখাচোখির ক্ষণেই পিতার বয়সি মানুষটার দৃষ্টি চমকে দেয় সেহরাকে। কাঁচা-পাকা দাড়ির কৃষ্ণ অথচ রহস্যময় মানুষটার মুখোমুখি হয়ে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ অনুভব করে সেহরা এবং প্রথম দর্শনেই তাঁকে ভালোও বেসে ফেলে।
একদিকে জীবন সংগ্রাম, বিভিন্ন জীবন জটিলতা, সিনিয়রদের লোলুপদৃষ্টি এবং ভোগতাড়িত পুরুষ সমাজের চাপ অন্যদিকে মোহন নামের ঋষি পুরুষের প্রতি তীব্র প্রেমাবেগ সেহরার জীবনে ঝড় তোলে।
সে একদিকে যেমন সতীর্থ অফিসার, প্রশিক্ষণার্থীদের সহযোগিতা, ভালোবাসায় সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পায় অন্যদিকে একইভাবে অনেকের আচরণ যা একজন নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি হিসেবেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত, তার প্রবল টানাপোড়েনে সেহরা ক্ষত-বিক্ষত হয়।
ছুটিতে এসে প্রৌঢ় মোহনের সঙ্গে সেহরার সাক্ষাৎ ঘটে। একাকী জীবন কাটানো মোহনের সাহচর্য সেহরার জীবনে শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত হয়ে যায়।
সেই প্রেমটুকু নিয়েই সেহরা ফিরে যায় কর্মক্ষেত্রে। মোহনের সাথে তার ফোনালাপে প্রেম গভীর হতে থাকে। কিন্তু বিশ্বস্ত বন্ধু এবং সহকর্মীর প্রতারণায় ঘটে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বান্ধবীর নিমন্ত্রণে তার ফ্লাটে যাওয়ার পর কৌশলে অফিসে যাওয়ার নাম করে সে সেহরাকে মূলত তার ফ্লাটে কোনো একজনের ভোগের সামগ্রী বানিয়ে নিজেকে লুকায়।
মঈন আহমেদ, (পুরো নাম : মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আহমেদ) সদালাপী, বিনয়ী ও সত্যনিষ্ঠ একজন মানুষ। তিনি একজন কবি, নাট্যকার, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক। ১৯৭২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার বাগঝাপা গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. মোক্তার হোসেন মোল্যা, মাতা মমতাজ বেগম। বাবা একজন ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিনী। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান। ১৯৮৮ সালে তিনি কাশিয়ানী জি.সি. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। কৈশোর থেকেই সাহিত্যের প্রতি রয়েছে তার বিশেষ অনুরাগ। কলেজে ছাত্রাবস্থায় তিনি প্রথম নাটক লেখেন। তিনি ১৯৯৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, পিলখানা, ঢাকায় অধ্যাপনা শুরু করেন। এ কলেজে ২০০৫ সালে তিনি ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষক’ এর মর্যাদা পান। মঈন আহমেদ ২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএস-এর মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করেন। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ, সিলেটে তিনি ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষক-২০১২ পদক’ প্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, গোপালগঞ্জে ‘সহকারী অধ্যাপক, বাংলা’ হিসেবে কর্মরত আছেন । তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতি-কর্মী। ১৯৯২ সাল থেকে অদ্যাবধি বাংলা মঞ্চনাটকের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। তার অভিনীত মোট মঞ্চ নাটকের সংখ্যা ১৮টি, নির্দেশিত নাটক ০৫টি। গত বছর বইমেলায় প্রকাশিত হয় তাঁর বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক ত্রয়ী নাট্য। তাঁর রচিত ১৩টি গল্প, পাঁচটি নাটক ও প্রবন্ধ দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সৃজনশীল সাহিত্য পত্রিকা, থিয়েটার আন্দোলন, একাধিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। পারিবারিক জীবনে তিনি অত্যন্ত সুখি একজন মানুষ।