আবদুশ শাকুর (১৯৪১-২০১৩) বাংলাদেশের সাহিত্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর রচনাসাহিত্যের দীপ্তি ও মননশীলতা সমবাদার পাঠককে মুগ্ধ করে। 'আবদুশ শাকুরের সাহিত্য: বিষয়-বিন্যাস ও নির্মাণকৌশল' গ্রন্থটিতে আবদুশ শাকুরের সাহিত্যের নানা প্রসঙ্গ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মধ্যবিত্তের জীবনচেতনা রূপায়ণে তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করেছেন। সমাজ ও সাহিত্যের নিবিড় অন্বয় শাকুরের সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আবদুশ শাকুর তাঁর সাহিত্যের গভীরে আলোক নিক্ষেপের প্রতি মনোযোগী। তাঁর রম্যরচনায় আবেগ আছে, যুক্তি আছে, স্বদেশের সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি পক্ষপাত আছে; কিন্তু আবেগের প্রাবল্য নেই। অযৌক্তিক বিষয়ের অন্ধ অনুকরণ নেই। শ্রোতার মনে আকস্মিক একটা টেনশানের সৃষ্টি করে তাকে চরম পরিণতিতে না পৌছিয়ে মাঝপথে হঠাৎ পাংচার করে দিয়ে নাটকীয় আধহ তৈরি করা হাস্যরসমণ্ডিত কথাকারের একটা সাধারণ কৌশল। অন্যান্য রম্যরচনাকার যেখানে হাস্যরসের নাটকীয়তা সৃষ্টিতে শক্তিশালী কোনো ঘটনা বা কাহিনির আশ্রয় নিয়েছেন- আবদুশ শাকুর সেখানে ঐশ্বর্যপূর্ণ ভাষার সাহায্যে সামান্য বিষয়কে অসামান্য করে তুলেছেন। ঘটনা বা কাহিনি যা-ই হোক না কেন, শাকুর তাঁর ভাষার ক্ষুরধার শব্দ প্রয়োগে হাস্যরস সৃষ্টির কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন।
আবদুশ শাকুরের নানামুখি সৃষ্টির উজ্জ্বল দিক হলো তাঁর সমৃদ্ধ গদ্যভাষা। তিনি গবেষণা মনোবৃত্তি, সৃষ্টিশীলতা আর অধ্যবসায়কে বৈঠকি চঙে উপস্থাপন করে আকর্ষণীয় সাহিত্যনির্মাণ করেছেন। তাঁর প্রবন্ধ ও গবেষণা সাহিত্যের মননশীলতা রসমণ্ডিত ও হৃদয়স্পর্শী। উপন্যাসের চরিত্রচিত্রণ ও কাহিনিতে দুর্বলতা থাকলেও তা কখনো জীবনবিচ্ছিন্ন ও বাস্তবতা বর্জিত নয়। কথাশিল্পী আবদুশ শাকুর উপমা, রূপক-প্রতীক, চিত্রকল্পের প্রয়োগে সাহিত্যে যে দৃশ্যপট তৈরি করেন তা সমৃদ্ধ ও সুখপাঠ্য।
জীবনবাদী আবদুশ শাকুর জীবনের পুনর্জাগরণের শক্তিতে আত্মবিশ্বাসী। কঠোর-কঠিন জীবনের অসংখ্য অভিজ্ঞতাকে স্বকীয় নির্মাণভঙ্গিমায় আবদুশ শাকুর তাঁর সাহিত্যে সার্থকভাবে রূপায়িত করেছেন। এই গ্রন্থে শাকুর সাহিত্যের বিচিত্র বিষয় মূল্যায়নের প্রয়াস রয়েছে। প্রত্যাশা করছি এই প্রবন্ধ গ্রন্থটি মননশীল, দায়বদ্ধ ও মার্জিত রুচির সাহিত্য নির্মাতাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করবে।