মনুষ্য (Homo-Sapiens) সভ্যতার মধ্যে মহানবী (সা) সবচেয়ে প্রভাবিত ব্যক্তিত্ব। যিনি কখনো ছলচাতুরীর কোনো আশ্রয় গ্রহণ করেননি। তবে তিনি ছিলেন সর্বাধিক সঙ্কটাপন্ন প্রতিকূল সম্মুখীন একজন মহামানব। প্রতিকূলতার মধ্যে মাত্র তেইশ বছরের নবুওয়াতি জীবনে আরব দেশসহ গোটা বিশ্বে তাঁর সফলতার চিত্র রয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি ব্যাপক দায়িত্ব পালন করেন।
আরব বিশ্বে ইসলামের আদর্শ ছড়িয়ে পড়লে মহানবী (সা) বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র প্রধানদের নিকট বার্তা বাহকের মাধ্যমে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।
মহাকালের স্রোতের বাঁকে ধর্ম-বিশ্বাস সব সময়ই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। ইসলামের আদর্শগত মতবাদ অনেকের নিকট নতুন মনে হল।
মানুষ হিসেবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবাই আল্লাহর কাছে সমান। প্রথাগতভাবে যা শিখেছি তার সাথে কুরআন ও হাদীসের গবেষণামূলক কিছু ব্যাখ্যা সংযোজন করেছি। বিশুদ্ধ অকিদা নিয়ে গবেষণা করলে আল্লাহর প্রদত্ত জ্ঞান (ইলম) অর্জিত হয়ে থাকে। তাই আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা ‘রববি যিদনী ইলমা’ (হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন) পাঠ করে লেখা শুরু করছি।
লেখার শুরুতে অনেক জ্ঞানীদের কাছে ছাত্র হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়েই পবিত্র আল-কুরআনের প্রাসঙ্গিক অর্থ বুঝার চেষ্টা করেছি। যারা আমাকে পড়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন এবং গবেষণার আলোকে লেখার জন্য অনুরোধ করেছেন, তাদের সকলের কাছে ঋণী।
এরপর পবিত্র আল-কুরআনের তাফসীরসহ সম্পূর্ণ পড়া শেষ করতে গিয়ে প্রাসঙ্গিত আয়াতগুলো মার্ক করতে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে, কিন্তু বারবার কুরআন অর্থসহ পাঠ করার পরও মনে হচ্ছে কিছুই পড়িনি এবং বিন্দুমাত্র শিক্ষা অর্জন করতে পারিনি। সবকিছুই যেন ভুলে যাই। এরপরও কেন যেন লিখতে বসা। প্রথাগত শিক্ষার অর্জন করতে গিয়ে মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীর কতগুলো সার্টিফিকেট ছাড়া আর কিছুই অর্জন করিনি। একটি আর্টিকেল বা বই যতবার পাঠ করি, ততবারই মনে হয় এখনো অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে।
একটি বই নিজে লিখে যতবার পাঠ করি ততবারই মনে হয় এখনো মনের আসল কথা লেখা হয়নি। মনের সব কথা কোনো দিন লিখা শেষ হবে না। পড়তে পড়তে দিন শেষ হবে, কিন্তু পড়া শেষ হবে না। জ্ঞান অর্জন করতে জীবন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু জ্ঞান অর্জন শেষ হবে না।
মহাজগতের সৃষ্টিলগ্ন থেকে যে শূন্যতা চলে আসছিল তা কেবল মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর মাধ্যমেই বিদায় হজ্জের ভাষণের মধ্য দিয়ে পূর্ণ হয়েছিল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আজ তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করে দিয়েছি।”
মহামানব হযরত মুহাম্মদ এর বিদায় হজ্জের ভাষণটি কয়েকটি গ্রন্থ থেকে অধ্যয়ন করার পর মনে হলো জীবনে যত ভাষণ পড়েছি, শুনেছি এভাষণের মতো তাৎপর্যপূর্ণ দ্বিতীয়টি আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু এরপরও মনে হল, গবেষণামূলক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাদ পড়েছে, তাই এ কাজে হাত দেয়া।
রোপণ করা সব দানা যেমন কখনো অংকুরিত হয় না;
তেমন জ্ঞানের সব কথা ভাষা দিয়ে শেষ করা যায় না।