আল্লাহ্ পাকের যত মাখলুক আছে, শ্রেষ্ঠ মাখলুক হিসাবে আমরা চিহ্নিত। আল্লাহ্ পাক শ্রেষ্ঠ মাখলুক হিসাবে আমাদের মর্যাদা দিয়েছেন। যত মাখলুক আছে, সমস্ত মাখলুক আমাদের উপকারের জন্য। আর আমরা আল্লাহ্ পাকের হুকুম আহকাম পালনের জন্য। তাই আমরা হায়াতের জিন্দেগিতে সব অবস্থায় আল্লাহ্ পাকের ধ্যান-খেয়াল হৃদয়ে পয়দা করে রাখবো, তা আবার হজুর পাক (সা) এর তরিকা অনুযায়ী। এর বাহিরে আমাদের কোন সুযোগ নাই একটু নড়াচড়া করার মতো। আজ আমরা দুনিয়া নিয়ে পাগল। নেক আমল করার মতো হাতে সময় নেই। ধরা যাক এক মহল্লায় দুই-তিনশত পরিবার বসবাস করি। মসজিদে আযান হলে দেখা যায়, এক-দুই কাতার মোকতাদি হয় না। শুক্রবার মসজিদ ভর্তি মোকতাদি। দুই-তিনশত পরিবারের মধ্যে ওয়াক্তি নামাজের মধ্যে এক কাতার। আমরা কী আল্লাহ্ পাকের হুকুম পালন করলাম?
আজ আমাদের মাঝে বে-হকে জীবন-যাপন। মৃত্যু সবচেয়ে আমাদের কাছে অবস্থান করে। অথচ মৃত্যুর দিকে আমাদের কোনো খেয়াল নেই। ঈমানী মৃত্যু নসিব হতে হবে, কলেমা ওয়ালা মৃত্যু নসিব হতে হবে, এদিকে কোনো নজর নেই। এই তো শোনা যাচ্ছে শোক-সংবাদ! এখন তো আর নেক আমল করার সুযোগ নেই। এখন কী অবস্থা?
এই জন্য ভাই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করি। নেক আমল ছেড়ে অনেকেই অবৈধ অর্থের দিকে লেগে আছি। কি হবে গাড়ি, বাড়ি অট্টালিকা করে? বোম্বাই খাট, জাজিমের বিছানা, মখমলের চাদর, ঘরে বিদ্যুৎ, এসি ইত্যাদি। কিন্তু কেন, আমাদের ভাই আমাদের প্রতিবেশী আজ অবস্থান করছে ভাঙ্গা ঘরে, কুড়ে ঘরে, তারাও তো আমাদের মতো মানুষ। যারা নেক আমল করে তারা ভাবে, আমাদের মতো পরেহেজগার, তাকওয়াবান আর নেই। ডাক্তার ভাবে আমার চেয়ে বড় ডাক্তার আর নেই। এমনটা সব স্তরে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সুদ-ঘুষ, মিথ্যা দিয়ে জীবন, সমাজ ব্যবস্থা। কি হবে অবৈধ অর্থ দিয়ে, সামনে কবর! কবরে আমল নেই। আযান হয়েছে, নামাজের খেয়াল নেই। বাজারে চায়ের দোকানে গাল-গল্প। টেলিভিশনের পর্দায় চোখ। দুনিয়া তো একটা স্বপ্ন। আখেরাত চিরস্থায়ী। মৃত্যুর পর কবর গহীন অন্ধকার। সাপ-বিচ্ছুতে ভরা।
পরিপূর্ণ নেক আমল না করে কবরে যাওয়া যাবে না। পুরিপূর্ণ ঈমান নিয়ে কবরে যেতে হবে। আখেরাত চিরস্থায়ী। দুনিয়ায় আরাম আয়েসের জন্য আমরা অনেক কিছুই করি। আজ সুদ-ঘুষ, মিথ্যা, অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, ভূমি দখল সব অন্যায়ের সাথে আমরা জড়িত। এতো অন্যায় করা মানে আখেরাত বিসর্জন দেওয়া। আমাদের হায়াতটা স্বপ্ন, চোখের পলক মাত্র। আল্লাহ্ পাকের এতো নিয়ামত রাজি সেটা শুধু আমাদের জন্য আকাশে রাশি-রাশি তারা, সূর্য্য, চন্দ্র, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, গাছ-গাছালি, পশু-পাখি, মেঘের গর্জন, আকাশের ডাক, বিদ্যুৎ চমকানি, আষাঢ়ে বর্ষা, বসন্তে কোকিলের ডাক, কতো ফল, কতো ফুল, প্রকৃতির এতো শোভা, এতো কিছু ভুলে কোথায় রঙ্গ-মঞ্চ, রাজমহল, নামি-দামি গাড়ি-বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে কবরে।
কবর গহীন অন্ধকার, আযাবের ঘর। কোথায় আমাদের ক্ষমতা, কোথায় আমাদের সম্পদ, কোথায় অট্টালিকা, সব ছেড়ে খালি হাতে যেতে হবে। যখন আমাদের ডাক আসবে, এক সেকেন্ড আগেও না পরেও না।
আমরা যে শ্রেণিরই হই না কেন, আমাদের সকলের একই যম, একই কাপড়, একই কবর, একই সওয়াল-জওয়াব, কোনো ভোদাভেদ নেই।
হারাম অর্থ খেয়ে যতই নেক আমল করি, সেটা আমার কাজে লাগবে না। হারাম অর্থ দিয়ে হজ্ব করে কাবার গিলাফ ধরে কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলের সঙ্গে যদি রক্ত আসে, তবুও কাজে লাগবে না।
মসজিদ নববীতে হুজুর পাক (সা) রওজা পাককে সামনে রেখে যতই সালাম দেই, সে সালাম কাজে আসবে না। যদি আমার সুদের টাকা, ঘুষের টাকা হয়।
সুদ-ঘুষে আমরা জর্জরিত। আমরা যদি সুদ নাও খাই, তবু আমাদের গায়ে ছিটে ফোঁটা একটু হলেও আছে।
আমরা সুদ-ঘুষ মুক্ত জীবন গড়ি। সুদের টাকা, ঘুষের টাকা অবৈধ অর্থ যেটা কাজে লাগবে না, তার প্রতিদান আমরা জানি। সুদের টাকায় আজ পৃথিবী ছেঁয়ে গেছে। মিথ্যায় ভরপুর। কথা বলি মিথ্যা।
আল্লাহ্ পাক আমাদের সমস্ত হারাম থেকে হেফাজত করুক, সমস্ত বদ আমল থেকে হেফাজত করুক। হায়াত পর্যন্ত শিরক মুক্ত, বিদআত মুক্ত নেক আমল করার তৌফিক দান করুক।