জীবনের রঙ্গমঞ্চে' স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবী শান্তিসুধা ঘোষের আত্মজীবনী হলেও সামাজিক ইতিহাস এবং সাহিত্যকর্ম হিসাবে বইটি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। বরিশাল-বিধৌত কীর্তনখোলা নদীর বিশালতা নিবিড় ছায়া ফেলেছে শান্তিসুধার শৈশবের দিনগুলিতে, কলকাতায় ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ের উদার আবহাওয়ায় তরুণী শান্তিসুধা সহপাঠী হিসাবে পান কমলা দাশগুপ্তকে। পরবর্তীকালে কলকাতায় এম এ পড়তে এসে কমলার মাধ্যমে পরিচিত হন কল্যাণী দাস, বীণা দাসের মতন তরুণীদের সাথে যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। বরিশালেই তরুণী শান্তিসুধার পরিচয় হয়েছিল আর এক বিপ্লবিনী সুহাসিনী গাঙ্গুলির সাথে। শান্তিসুধার লেখনীতে ছবির মতন ফুটে উঠেছে কলকাতার ওয়েলিংটন স্কোয়ারে কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন-যে অধিবেশনে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, বরিশালে আহৃত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কনফারেন্সে চিত্তরঞ্জন দাশ ও বিপিন পালের ভাষণ, বরিশালের অগ্রজ নেতা অশ্বিনী দত্তের প্রয়াণ-শোক এবং পার্ক সার্কাসে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন। উঠে এসেছে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ ও কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের সেইসব হারানো কৌতুককর দিনগুলির কথা। সামাজিক ইতিহাসের নিরিখে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, ছাত্রী শান্তিসুধাকে কেন্দ্র করে যেমন এই দুটি কলেজে সহশিক্ষার সূচনা হয়েছিল তেমনই অধ্যাপিকা শান্তিসুধা হলেন তদানীন্তন অবিভক্ত বাংলার প্রথম মহিলা যিনি কোন কো-এড কলেজে (বরিশাল বি এম কলেজ) প্রথম চাকরি করার সুযোগ পান ও চাকরিসূত্রে সহকর্মী হিসাবে পান কবি জীবনানন্দ দাসকে।