রানার নিজেকে পুড়তে চন্চনে রোদেলা দুপুরে একাকি হাঁটতে খুব ইচ্ছে করে। শ্রাবণের অঝোর ধারায় বিদ্যুৎ চমকানির পর গুড় গুড় শব্দের মাঝে সাহসিকতার সাথে নিজেকে ভেজাতে খুব ইচ্ছে হয়। হারিয়ে যাওয়া কাউকে খুঁজে বেড়ায় হাজার মানুষের ভিড়ে। এতদিন পর তাকে তো খোঁজার কথা নয়। রোদের উত্তাপ কমে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। কপালের চামড়া কুচকে গেছে। সৌন্দর্য বলতে কিছু নেই। আকাশের তারাগুলো যেভাবে নিভু নিভু করে ঠিক সেভাবেই জীবনের মাঝে যৌবন নিভু নিভু করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে হৃদয় মাঝে বড়ই হাহাকার। জীবন থেকে ভালোবাসা কখনও ফুরিয়ে যায় না। ভালোবাসার তাকে খুঁজতে রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। সকালে হাঁটতে বের হলে আগের মতো অতটা দ্রুততার সাথে হাঁটতে পারে না। নিজের অক্ষমতার কথা বুঝতে পেরে থমকে দাঁড়ায়। রানা বিড়বিড় করে বলে, আমি জানি সে আমাকে ভালোবাসলেও আমার দারিদ্রতাকে কখনও ভালোবাসতে পারেনি। তাই মাঝিহীন নৌকার মাঝে ভালোবাসাটুকু দুলতে দুলতে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। সবাই বলে, একজন বিবাহিত ব্যক্তি কেন অতীতকে ভুলতে পারে না। সে একদম বেয়াদব। সবার মুখে মুখে বেয়াদব শব্দটি এতটাই উচ্চারিত হয়েছে যে তার আসল নামটি হারিয়ে যেতে বসেছে। আবার কেউ কেউ পাগলও বলে থাকে।
সমাজের কতিপয় ব্যক্তি রয়েছে যারা নিজেদের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে মনে করে। মাস শেষে হাতে কাড়ি কাড়ি টাকা চলে আসে। নিজেদের নামকরা ব্র্যান্ডের গাড়ি রয়েছে, বাড়ি রয়েছে, রঙিন জীবন রয়েছে। যে জীবনে তারা শুধুমাত্র অভিনয় করে চলেছে। তারা কাউকেই তোয়াক্কা করে না। তাদের ধারণা সমাজের অন্য কাউকে তাদের প্রয়োজন হবে না। জীবনকে স্বাচ্ছন্দময় করতে প্রত্যেকটি উপকরণ তাদের হাতের মুঠোয়। কষ্ট কখনও তাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি। তারা সবসময় অতীত ভুলে যায়। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা তাদের জানা। সে রকম একজন ব্যক্তি জালাল উদ্দিন মোল্লা।
বাস্তবতা মানেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা। বাস্তবতা শব্দটির গায়ে লেগে আছে কঠিন কিছু সত্য। যা হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণের মাধ্যমে বাস্তব সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করে। তবে আজকাল অনেকগুলো অসত্য নিয়ে মানুষের জীবন গড়ে উঠছে। সেই জীবনের আবার অনেক অহংকার। যে অহংকারের কারণে মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করে না। সবজান্তা হিসেবে নিজেকে জাহির করে নিজের অযোগ্যতাকে মানুষের মন থেকে মুছে দেবার প্রচেষ্টা। ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কে আপন কে পর তার কাছে বড়ই তুচ্ছ।
ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য যেকোনো সময় যে কারও বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে। অতিশয় আপন মানুষদেরও নিঃসংকোচে নির্দয়ভাবে ক্ষতি করা তার কাছে কোনো ব্যাপার নয়। অথচ একসময় যারা তার অতি নিকটে থেকে নানাভাবে তাকে সহযোগিতা করেছে তারা আজ শত্রুতে পরিণত হয়েছে। জালাল উদ্দিন মোল্লার মতো লোকরাই পারে এতটা সত্য ভুলে যেতে। মিথ্যে কিছু মানুষকে সাথে নিয়ে বড়াই করতে। সেই মিথ্যে মানুষরা যেমনিভাবে জানে একদিন তাদেরকেও ছুড়ে ফেলবে ঠিক তেমনিভাবে জালাল উদ্দিন মোল্লাও জানে ওরা একদিন তাকে ছেড়ে নিজেদের নতুন শক্তি হিসেবে জানান দিবে। তাই বলা যায় এই ঐক্য মিথ্যার সাথে মিথ্যার ঐক্য। ফলাফল শূন্য। ফলাফল শূন্যের কর্মকাণ্ড সবসময় মুখ থুবড়ে পড়ে।
নৈতিক অবক্ষয় এতটাই হয়েছে যে, রাষ্ট্র এবং সমাজের জন্য মূল্য দিবে এরকম মানুষের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। বহু মানুষ উদগ্রীব হয়ে বসে আছে রাষ্ট্র এবং সমাজ থেকে শুধু নেবার জন্য। রাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের মধ্যে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য নানা অপকৌশলে লিপ্ত। মোল্লা জালাল উদ্দিন এই নীতিতে বিশ্বাস করে সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত রয়েছে।