মাশির হোসেন [হিরু] ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কাটে ঢাকার খাজেদেওয়ান লেন ও আর্মানিটোলা এলাকায়। পরবর্তী সময়ে তিনি স্থায়ীভাবে শান্তিনগরে বসবাস শুরু করেন।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল ও আর্মানিটোলা হাই স্কুলে, যেখানে ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
সাংবাদিকতায় তাঁর প্রবেশ ঘটে The Pakistan Observer-এ স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত দৈনিক পাকিস্তান [পরবর্তীতে দৈনিক বাংলা]-এ কাজ করেন, যেখানে তিনি স্পোর্টস এডিটর থেকে বিশেষ সংবাদদাতা এবং অর্থনীতি বিষয়ক বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ক্রীড়া সাংবাদিকতায় তিনি নতুন ধারা তৈরি করেন; সংবাদপত্রে ‘ক্রীড়া পাতা’ সংযোজনের পথিকৃৎ ছিলেন এবং ‘দামাল সামার’ নামে গ্রীষ্মকালীন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সূচনা করেন।
ভাষা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবদুল গাফফার চৌধুরীর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ কবিতাকে গানের রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। এর ফলে তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কার হতে হয়।
তিনি ইডেন মহিলা কলেজে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভ ‘শহীদ মিনার’ স্থাপনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়েও তিনি সোচ্চার ছিলেন। এরশাদ আমলে বড় পুকুরিয়ার কয়লা আবিষ্কারের সংবাদ তিনি প্রথম প্রকাশ করেন, যা দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে।
সাংবাদিকতায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৫ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সক্রিয় সদস্য ও তরুণ সাংবাদিকদের মেন্টর হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন। ২০০৬ সালের ২৫ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কবি ও গবেষক মুস্তাফা মজিদ এর রয়েছে ১০টি কাব্যগ্রন্থ। যথাক্রমে- ‘মেঘবতী সুবর্ণভূমি, “তােকে নিয়ে প্রেম প্রেম খেলা, কুসুমিত পঞ্চদশী’, ‘পুষ্পপত্রে নীলকণ্ঠ’, ‘জনযুদ্ধের কনভয়, ‘সাকিন সুবিদখালী’, ‘স্বাতীর কাছে চিঠি’, Diary of a Nepalese Guerrillas সম্পাদিত কবিতাসমগ্র ঃ মাও সেতুঙ এবং নিবেদিত কবিতা সংকলন ‘প্রাণিত রবীন্দ্রনাথ’ । এই কবি কবিতা লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসরত। মঙ্গোলীয় ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে লােক প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র নিয়েও গবেষণা করে আসছেন। বাংলাদেশের রাখাইন জাতিসত্তার আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক সমীক্ষা নিয়ে অভিসন্দর্ভ রচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। যা বাংলাদেশের রাখাইন’ শিরােনামে বাংলা ভাষায় বাংলা। একাডেমী এবং The Rakhaines শিরােনামে ইংরেজি ভাষায়। ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । ড. মুস্তাফা মজিদের এ পর্যন্ত রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা। ৪০ উর্ধ্ব। তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থের মধ্যে ত্রিপুরা জাতি। পরিচয়’, ‘পটুয়াখালীর রাখাইন উপজাতি', আদিবাসী রাখাইন’, ‘মারমা জাতিসত্তা' বাংলাদেশে মঙ্গোলীয়। আদিবাসী’, ‘গারাে জাতিসত্তহজং জাতিসত্তা’, আদিবাসী সংস্কৃতি (১ম ও ২য় খণ্ড), রূপান্তরের দেশকাল’, ‘সমকালের আত্মকথন’, ‘লােক প্রশাসনের তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ’, ‘বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র', 'রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্র’, ‘নেতৃত্বের স্বরূপ’, বাংলাদেশে বঙ্কিমচন্দ্র’, ‘মুক্ত ও মুগ্ধদৃষ্টির রবীন্দ্র বিতর্ক’ । আর ছােটদের জন্য রচিত ও সম্পাদিত গল্প গ্রন্থ। ‘দীপুর স্বপ্নের অরণি’, ‘জীবন থেকে’ ও ‘ছােটদের ৭টি মঞ্চ নাটক’ এবং জীবনী গ্রন্থ ‘রূপকথার নায়ক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন’ ও ‘বঙ্গবীর ওসমানী। মার্কসীয় মুক্ত চিন্তার যৌক্তিক দৃষ্টবাদে অবিচল মুস্তাফা মজিদ কৈশােরে উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে। অংশগ্রহণসহ কৈশাের থেকেই নানা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। জড়িত । বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ছায়ানট, ঢাকা থিয়েটার ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য। এছাড়াও তিনি সত্তর ও আশির দশকে শিশু-কিশাের। সংগঠন গড়া ও নাট্য আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন । পেশায় প্রথমে সাংবাদিকতা এবং পরে ১৯৮৪ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত আছেন। বর্তমানে মহাব্যবস্থাপক ড. মুস্তাফা মজিদ ১৯৫৫ সালের ১৪ই এপ্রিল পটুয়াখালী জেলার সুবিদখালীতে জন্মগ্রহণ করেন । ভ্রমণ করেছেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানী, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ড।