কাশ্মীর মানেই এক বুক আজাদীর স্বপ্ন, কাশ্মীর মানেই দীর্ঘ সময় ধরে পথে পথে কন্দরে কন্দরে আজাদীর জন্য বুকের তপ্ত খুন ঝরানোর ইতিহাস। আবার কাশ্মীর মানেই যেন, ফিলিস্তিন আর জিনজিয়াংয়ের মতো স্বাধীনতাহীন এক বৃহৎ কারাগার। এই ভূ-খণ্ডে দমন-পীড়ন আর স্বাধীনতা হরণে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কালাকানুন, ক্র্যাকডাউন, লকডাউন আর জরুরি অবস্থা। সামরিকতন্ত্রের যাঁতাকলে পিষ্ট করা হয়েছে কাশ্মীরের আবালবৃদ্ধবনিতা।
যুগের পর যুগ কাশ্মীরি জনগণকে ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি নিষ্পেষিত করছে। কাশ্মীরি আজাদী আন্দোলন বারবার যেন দ্বি-জাতি তত্ত্বকে বিজয়ী ঘোষণা করছে। অথচ ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির কী মায়াকান্না ছিল মুসলমানদের জন্য! আজ কাশ্মীরের ব্যাপারে তারা নীরব আর নিশ্চুপ কেন? পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ অক্লান্ত পরিশ্রম করে তার দাবিকে যখন প্রতিষ্ঠিত করে দিল্লি ছেড়ে করাচিতে চলে যান, তখন প্যাটেল কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে বলেছিল, ‘ভারতের শরীর থেকে বিষ দূর করা হয়েছে। আমরা এবার এক এবং অবিভাজনীয়। তোমরা সমুদ্র বা নদীর জলকে ভাগ করতে পারো না। মুসলমানদের শিকড়, ধর্মীয় পবিত্র স্থান আর কেন্দ্র এখানে রয়েছে। আমি জানি না পাকিস্তানে তারা কী করতে পারবেন। তাদের ফিরে আসতে খুব বেশিদিন লাগবে না।’
জানি না মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি কী করতে পেরেছে মুসলমানদের জন্য! তবে এতটুকু বলা যায়, মুসলমানদের কাশ্মীরিদের মতো নিষ্পেষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছে; পেরেছে তাদের মাতৃভূমিকে কাশ্মীরের মতো বিশ্বের বৃহৎ সামরিকায়িত কারাগারে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করতে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার ও কংগ্রেস ‘পাকিস্তান দাবি’ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। তবে তারা কেউ চায়নি পাকিস্তান টিকে থাকুক। তবুও শুরু থেকেই পাকিস্তান দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করেই। তাই ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যবাদী শক্তির প্রতিভূরা ক্ষোভ মিটিয়েছে এভাবে, ‘শেষ বিচারে দেশ ভাগের ওই মর্মান্তিক নাটকে কার কতটুকু লাভ হয়েছিল, তার খোঁজ হয়তো অবান্তর। জিন্নাহ্ যদিও পাকিস্তান জন্মের মহিমার মধ্যেই মারা যান, তার জাতক দেশটি অভিভাবকহীন, অনাথই থেকে যায়। তার অর্জনটিও রয়ে যায় একরকম বন্ধ্যা। পাকিস্তান প্রমাণ করেছে মুসলিমদের স্বতন্ত্র জাতীয়তার তত্ত্বটি দেউলিয়াপনা।’