মা মরা ছেলে অনিমেষ। তার জন্মের পরেই তার মা মারা যায়। বাবাই তাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করছে। অনিমেষের বাবা রিক্সা চালাতো৷নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার। দিন আনে দিন খায় বললেই চলে। সে বড় হচ্ছে আর তার আচরণ যেনো কেমন হয়ে যাচ্ছে। অনিমেষ যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন তার বাবা তার জন্য টিফিন নিয়ে যেতো প্রতিদিন। একদিন সে হঠাৎ বাড়ি এসে বলে, বাবা আমার স্কুলে আর তুমি যাবা না। এটা বলার কারণ তার বাবার একটা চোখ ছিলো না। তারপর থেকে আর যায় না। অনিমেষ পড়ালেখায় খুব ভালো। সে যখন যা চাইতো তার বাবা তাকে তাই দিতো একটু দেরী হলেও। সে যখন কলেজে উঠে তখন তার বাবাকে বলে, কলেজে সব বন্ধুদের স্মার্টফোন তারও লাগবে। তার বাবা অনেক কষ্ট করে নয় হাজার টাকা জমায়। আর এক হাজার টাকা হলেই স্মার্টফোন কিনা যাবে। তার বাবার রিক্সায় একজন প্যাসেঞ্জার উঠে, মোবাইলে কথা বলছে উনার মেয়ের জন্য জরুরী রক্ত লাগবে। একথা শুনে অনিমেষের বাবা মনে মনে ভাবে যে রক্ত দিলে যদি কিছু টাকা দেয় তাহলে মোবাইলটা কিনতে পারবো। লোকটা রিক্সা থেকে নামার সময়
অনিমেষের বাবা বললো- স্যার আপনার কি রক্ত লাগবে ?
লোকটা বললো হ্যা।
অনিমেষের বাবা বললো- আমি দিতে চাই রক্ত। আমার রক্ত পরীক্ষা করে দেখেন।
লোকটা বললো- চলেন চাচা।
রক্ত পরীক্ষা করে কোনো সমস্যা পায়নি আর রোগীর সাথে গ্রুপও মিলে যায়। রক্ত দেওয়া শেষ হলে, লোকটি খুশি হয়ে দুই হাজার টাকা দেয়। টাকাটা পেয়েই সোজা মোবাইলের দোকানে চলে যায়। মোবাইল কিনে ছেলের হোস্টেলে যায় দেওয়ার জন্য। অনিমেষের বন্ধুরা তাকে জিজ্ঞেস করলে বলে উনি আমাদের বাসার কাজের লোক। বাবার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। তার বাবা মন খারাপ করে চলে আসে৷তার বাবাকে বলে দেয় আর কখনো যেনো হোস্টেলে না আসে। কষ্ট পেলেও বাবার কোনো অভিমান নেই। অনিমেষ ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে। তার বাবার কতো আনন্দ, সবাইকে বলে বেড়ায়। অনেকে বলে, ছেলে এতো কষ্ট করে পড়াইতাছো দেইখো ভুলে যাইবো। লোকের কথায় পাত্তা দিতো না তার বাবা। বাবার হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকায় অনিমেষের ভার্সিটি ও শেষ হয়। এবার সে খুব ভালো একটা চাকরি পেয়েছে। নিজের পছন্দ মতো বিয়ে ও করে নিয়েছে। তার বাবার শরীরটা দিন দিন খারপ হচ্ছে। এখন আর আগের মতো পরিশ্রম সহ্যহয়না। অনিমেষ প্রতি মাসে তার বাবাকে খরচের টাকা দিতো৷অনেক কল দিলেও তাকে পাওয়া যেতো না। কল দিয়ে জানিয়েছে তার বাচ্চা হয়ছে। নাতনি হয়েছে শুনে কি আনন্দ মনে। অনেকদিন ছেলেকে দেখে না, কল দিলেও ধরছে না। খুব চিন্তিত মন নিয়ে অনিমেষের বন্ধুর থেকে তার বাসার ঠিকানা নিয়ে রওয়ানা হয়। বাসায় পৌছে দরজায় করাগাত, অনিমেষের বউ তাকে চিনে না। উনি বললো অনিমেষ কে বলো আসতে। অনিমেষ এসে অবাক, বলে কল ধরি না এজন্য চলে আসছো। কত টাকা লাগবে বলো।
বাবা- না রে টাকা লাগবে না। তোরে দেখতে খুব মন চাইতেছিলো।
অনিমেষ- বাবা তুমি চলে যাও। আমার মেয়ে তোমাকে দেখলে ভয় পাবে।
তার বাবা কিছু না বলে চলে আসে। সারাটা পথ চোখের জল ফেলে আসছে। কাকে এত কষ্ট করে বড় করলো এটা ভেবে। ঢাকা থেকে ফিরে এসে রাতেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। প্রতিবেশীরা অনিমেষকে অনেক কল দেয়। অবশেষে এলাকার মানুষজন মিলে দাফন সম্পন্ন করলো। মাস ছয়েক পরে অনিমেষ তার বাবাকে স্মরণ করলো। কোনো কল আসে না, আগে কল না ধরলেও কয়েকদিন পর পর কল দিতো। বাবার নাম্বারে কল দিলে বন্ধ দেখায়। অবশেষে সে বাড়ি আসে৷আসার পর জানতে পারে ছয় মাস আগেই তার বাবা মারা যায়। তার এক প্রতিবেশী চাচি তার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলে, তোমার বাবার ঘরে পাইছিলাম এটা। তাতে লিখা ছিলো, অনিমেষ! আমাকে বাবা বলে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগতো তোর। আমারে দেখতে বাজে লাগে এজন্য। তোর বয়স যখন তিন বছর তখন খেলতে গিয়ে তোর একটা চোখ নষ্ট হয়ে যায়। আমি বাবা হয়ে তোর এ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমার ডান চোখটা তোকে দিয়ে দেই। যদি এই চিঠিটা পড়িস তাহলে বাবা আমাকে মাফ করে দিস।