দীর্ঘ সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকার কারণে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে একটি বিষয় লক্ষ করা গেছে, তাহলো বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতা সম্পৃক্ত রেফারেন্স বইয়ের প্রচণ্ড অভাব। ইংরেজি ভাষায় প্রচুর বই থাকলেও বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতার একাডেমিক বই খুব একটা নেই বললেই চলে। হাতে গোনা দু’চারটা যাও প্রকাশিত হয়েছে তা সাংবাদিকতার ছাত্রছাত্রীদের জন্য পাঠ্যসূচি অনুসারে রচিত হয়নি। হয়েছে অনেকটা বিক্ষিপ্তভাবে, ফলে নবীন শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে।
আশির দশকের সূচনাকালে কিংবা মধ্যভাগেও এদেশে সাংবাদিকতায় পড়ুয়ার সংখ্যা ছিলো সীমিত। কিন্তু বর্তমানে আর পাঁচটি পছন্দের বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাংবাদিকতা। এখন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এ বিষয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী এবং প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে। অথচ বাজারে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যক্রম নির্ভর বইয়ের খুবই অভাব।
কেবল ছাত্রছাত্রীদের কথা বিবেচনায় না রেখে, সংবাদপত্র শিল্পের আকারও দিন দিন বিশাল হয়েছে। দেশে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে দৈনিক পত্রিকাসহ প্রকাশিত পত্র-পত্রিকার সংখ্যাও অসংখ্য। এই বিশাল সংবাদপত্র শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের সংখ্যা প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পত্রিকার প্রচার সংখ্যা মিডিয়া তালিকাভুক্ত পত্রিকার দেয়া প্রচার তথ্য মতে অর্ধ কোটিরও বেশি। সুতরাং এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কৌতূহলী অগ্রসর পাঠক-পাঠিকাদের জ্ঞান-পিপাসা মেটানোর বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতা বিষয়ক একাডেমিক এবং সহায়ক গ্রন্থের অভাববোধ থেকেই এ বিষয়ক লেখালেখি শুরু করি। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমান এ গ্রন্থ ‘গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা’। এ গ্রন্থটি অবশ্য সংক্ষিপ্ত কলেবরে কেবল সাংবাদিকতার সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট এবং সংবাদপত্র শিল্পের প্রাগ্রসর পাঠক-পাঠিকাদের কথা বিবেচনায় রেখেই রচনা করা হয়েছে। এ গ্রন্থটি অবশ্য সাংবাদিকতার নবীন শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে রচিত হয়েছে।
ছাত্রছাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন চাহিদা এবং সাংবাদিকতা পেশার তাগিদ থেকেই আজকের এই উদ্যোগ। সংবাদপত্রে লিড রচনা এক কঠিন কাজ। লিড বা সংবাদ সূচনা লিখতে রিপোর্টারগণকে প্রায়শই গলদঘর্ম হতে হয়। সাংবাদিকদের হরহামেশাই রিপোর্টের তথ্য জোগাতে নানাজনের সাক্ষাৎকার নিতে হয়। কাজেই রিপোর্টারগণ চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন না। কোথা থেকে কিভাবে শুরু করবেন, কার সাক্ষাৎকার নেবেন, কিভাবে নেবেন, কি সব তথ্য তাঁর কাছ থেকে জানা চাই-এসব নিয়ে অনেক ভাবনা থাকেন। সেগুলো হচ্ছে : সংবাদ সম্পাদনা, ছবি সম্পাদনা ও পৃষ্ঠাসজ্জা, সংবাদ কক্ষ ও তার কাজ, সম্পাদকীয় বিভাগ, কপির উৎস ও সম্পাদনা, ছবি বাছাই ও সম্পাদনা পদ্ধতি এবং পৃষ্ঠাসজ্জার রীতি-নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে উল্লিখিত অধ্যায়গুলোতে।
সাংবাদিকগণ কখনো আইনের ঊর্ধ্বে নন। আইন তাদেরকেও স্পর্শ করে। পেশার সুবিধার্থেই তাদের যেসব আইন সম্পর্কে জানতে হয় সেসব নিয়ে আলোচনা রয়েছে ‘সাংবাদিকতা সম্পর্কিত আইন’ শীর্ষক অধ্যায়ে। কপিরাইট আইন, এর ক্ষমতা, কপিরাইট আইন লঙ্ঘন-অলঙ্ঘন ইত্যাদি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে এ অধ্যায়েই।
প্রচার, প্রচারণা ও জনসংযোগ বিষয় নিয়ে আলোচনা রয়েছে। এভাবে বিষয়গুলোকে ধারাবাহিক বিন্যাসে উপস্থাপন করায় ছাত্রছাত্রীরা চটজলদি বিষয়ের মধ্যে ঢুকতে পারবেন বলেই আমার বিশ্বাস। পাশাপাশি সাংবাদিকতার বিপুল সংখ্যক শুভানুধ্যায়ী ও কৌতূহলী অগ্রসর পাঠক-পাঠিকাদের জ্ঞান-পিপাসা মেটাতেও এ গ্রন্থটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
সবশেষে সাংবাদিকতার ছাত্রছাত্রী, গবেষক, সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের বিপুল সংখ্যক কৌতূহলী অগ্রসর পাঠক-পাঠিকাদের যদি এই গ্রন্থটি সামান্যতম কাজে আসে তবে আমার দীর্ঘ দিনের শ্রম সার্থক হয়েছে বলেই মনে করবো।