জীবনে আনন্দ ও দুঃখ— এই দুই বিপরীতের মধ্য দিয়ে যে পূর্ণতার জন্ম হয়। সেই পূর্ণতা পাওয়ার কষ্ট, তা প্রায়ই সাধারণ মানুষকে অসাধারণ নিয়তির জন্য প্রস্তুত করে। শশীকেও তাই করেছে— শশী সক্ষম হয়েছে কঠিন জীবনের সিদ্ধান্তে!
‘আধখানা হলুদ সুর্য’ গল্পের চরিত্র কোনো রাজনৈতিক গল্পের চরিত্র নয়। তবুও শশী, কুলসুম ও বকশীবাড়ীর সকলে রাজনীতির জালের মধ্যে বাঁধা পড়ে।
ফাল্গুন মাসে একদিন কুলসুমের সিদ্ধান্তে শশীর জীবন একভাবে শুরু হলেও, তাঁকে পা ফেলতে হল অপ্রত্যাশিত জীবনে। যে জীবন শশীকে শেখায় জীবনে যুদ্ধ যায় না। এক যুদ্ধ যায়, আরেক যুদ্ধ আসে।
শশী ‘সাধারণ’ শব্দে মোড়া মানুষ— একাত্তর সালে অজানা পথে নেমে, যুদ্ধ কেন বাঁধে, না বুঝলেও, যুদ্ধ কী করে তা বুঝিয়েছে— সারা বিশ্বে যুদ্ধের কবলে পড়ে তারাই, যারা যুদ্ধ বাঁধায় না।
শশীর অমীমাংসিত জীবনের সব সিদ্ধান্তের ভার নেয় তাঁর কাকিমা— শশী সময়ের আবর্তে হেঁটে গেছে— মাথার উপরে ঠাঁই হারাবার ভয়ে। কুলসুম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল— তাঁর আঁকা আলপনার মাঝখানে শশী অধিকার নিয়ে দাঁড়াবে। শশীর জন্য তৈরি করে ভালোবাসার সংসার। সেই সিদ্ধান্তে অটল থেকে এত বছরের সংসার জীবনে কুলসুম জানলো, আপনের সাথেও সব দুশ্চিন্তা ভাগ করা যায় না। যার যার চিন্তা তার তার— ব্যক্তিগত।
আকবরের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ভালোবাসা, স্মৃতি, সংগ্রাম আনন্দ-বেদনার অদ্ভুদ এক জীবনগাঁথায় প্রমাণ করে কানকে বিশ্বাস না করার মত কথাও শুনতে হয়। মানুষের বিশ্বাস অবিশ্বাস বদল হয় তার অভিজ্ঞতায়। দোষীকে নির্দোষ প্রমাণ করা সহজ, নির্দোষকে নির্দোষ প্রমাণ করা সহজ না।
মীর যে গ্রাম ছেড়েছিল সেই গ্রামে, আদি বাড়ির সবার কাছে কী যেতে পারবে? মীর তাকায় না পিছনে উদ্ধত ভঙ্গির ছেলে দুটির দিকে, তাকায় একটি ছোট ছেলের মগজের টুকরো কল্পনায় বয়ে চলা রফিকের মন্থর গতির দিকে, কানে আসে রফিকের কথা— ‘একদিন সক্ষম ছিলাম এটা তো এখন গল্প। আমি অক্ষম কেমন করে হলাম সেটা হবে রাজনৈতিক গল্প। আমিই এখন মুক্তিযুদ্ধের একটা গল্প।
যুদ্ধের রিয়ালিটির নামে কত সহস্র যন্ত্রণার গল্প তৈরি হয়েছে এই বিশ্বে? পারে কী স্বাধীনতা তার মূল্য দিতে? মীরের দৃষ্টি যায় নদীর বুকে নির্ভীকচিত্তে সাতার কাটা ছেলেগুলোর দিকে। ভালোবাসার পথে দুঃখ যেন সহোদরের মতো চলতে থাকে— আমরা দুঃখ পাই, পূর্ণ হই।