মাল্যবান — জীবনানন্দ দাশের প্রথম উপন্যাস, যা কবির মৃত্যুর পরে ১৯৭০ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এটি শুধু একটি উপন্যাস নয়, এক অসহায় জীবনের আত্মপ্রকাশ—যেখানে সংসারের গহীন দুর্বোধ্যতায় দিকহারা এক নাবিকের যন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে। এটি যেন এক নীরব জীবনবন্দির স্বগতোক্তি, মুক্তিহীন জীবনের অন্তরালে চলমান এক গভীর মানবিক ট্র্যাজেডি।
এই উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে মাল্যবান ও তার স্ত্রী উৎপলার দাম্পত্য জীবনের অসামঞ্জস্য ও দ্বন্দ্ব। একদিকে এক অন্তর্মুখী, বিষণ্ণ, ভাবুক পুরুষ—অন্যদিকে এক ক্লান্ত, বিরক্ত, অথচ প্রতিক্রিয়াশীল স্ত্রী। তাঁদের বৈপরীত্যপূর্ণ মানসিকতা, সম্পর্কের শুষ্কতা ও অপূর্ণতার ছায়া পড়েছে উপন্যাসের প্রতিটি পরতে। অনেক সাহিত্যবোদ্ধা মনে করেন, উপন্যাসটির চরিত্র ও ঘটনা জীবনানন্দের নিজের জীবন এবং তাঁর স্ত্রী লাবণ্য দাশের সঙ্গে সম্পর্কেরই প্রতিফলন।
চমকপ্রদ বিষয় হলো—এই উপন্যাস প্রকাশ ঠেকাতে লাবণ্য দাশ নিজে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কারণ পাণ্ডুলিপি পড়েই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এতে তাঁর ব্যক্তিত্বের অপ্রকাশিত দিকগুলো অনাবৃত হয়েছে। তবুও তিনি সেই চেষ্টায় সফল হননি।
জীবনানন্দ দাশ মনে করতেন, সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জটিলতায় সাধারণ মানুষের জীবন যেন একটি নিরন্তর ঘূর্ণির মধ্যে আটকে আছে। এই বাস্তবতাকেই তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। তাঁর লেখা উপন্যাসগুলোর কাঠামো প্রচলিত ধারার বাইরে—না আছে সরাসরি শুরু, না আছে কোনও চূড়ান্ত সমাপ্তি। ফলে সমকালীন সাহিত্যিকরা অনেক সময় এগুলিকে “উপন্যাস” বলে মান্যতা দিতে চাননি। তবু জীবনানন্দ বিশ্বাস করতেন, মানুষের গভীর সমস্যাগুলিকে তুলে ধরার জন্য এই ধরণের বিকল্প গঠনের সাহিত্য অপরিহার্য।
বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে, তিনি কয়েক ডজন খাতায় লিখে গেছেন এই সব গল্প ও উপন্যাস—যেগুলোর প্রতিটি তাঁর নিজস্ব পথ ও দর্শন অনুসরণ করে রচিত। ইউরোপের কিছু বিখ্যাত লেখকের মতো তিনিও সাহস করেছেন গঠনভাঙা কাহিনি লেখার, যদিও তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিই গভীরভাবে বাঙালির জীবনসংকটকে কেন্দ্র করে।
মাল্যবান সেই সাহসী সৃষ্টিরই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। আশা করি পাঠকেরা উপন্যাসটি পড়ে এক ভিন্নরকম সাহিত্য অভিজ্ঞতা লাভ করবেন।
আপনি চাইলে এটি আরও সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘ করে নিতে পারেন।
জন্ম-(ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৮৯৯ - বঙ্গাব্দ ফাল্গুন ৬, ১৩০৫ - কার্তিক ৫, ১৩৬১) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক। তাকে বাংলাভাষার "শুদ্ধতম কবি" বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ২১টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকাল অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে। রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে তিনি সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত। তাকে বাংলাভাষার শুদ্ধতম কবি অভিধায় আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি (অক্টোবর ২২, ১৯৫৪ -বঙ্গাব্দ কার্তিক ৫, ১৩৬১ ) সালে মৃত্যু বরণ করেন।