বারট্র্যান্ড রাসেলের ‘দ্য কনকয়েস্ট অব হ্যাপিনে’ অবলম্বনে রচিত ‘সুখ’
আমরা গভীর বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি, বিশ্বনন্দিত গুণীচিন্তাবিদ সাহিত্যিক, দার্শনিক এবং ১৯৫০ সালে সাহিত্যতত্ত্বে নোবেল বিজয়ী বারট্র্যান্ড রাসেল (Bertrand Russell : 18 May 1872- 20 February 1970) প্রায় শতবর্ষী একজন মনীষীর জীবনদর্শনের আলোকিত প্রজ্ঞায় তিনি মোতাহের হোসেন চৌধুরী মূলত আমাদের শিক্ষা সংস্কৃতি সভ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ চিন্তা-ভাবনার দ্বারা আমাদের জীবনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছেন। সেসঙ্গে তিনি অত্যন্ত আপেক্ষিক বিষয় ‘সুখ’ অন্তর্জগত বিষয়ক ভাবনায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি বারট্র্যান্ড রাসেলের প্রতি ছিলেন গভীর শ্রদ্ধাশীল।
বারট্র্যান্ড রাসেলের প্রতি তাঁর আন্তরিক শ্রদ্ধা ও অশেষ সম্মান জানানোর মূলে ছিল বারট্র্যান্ড রাসেল নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনে অধিকারী, বিশ্লেষণী দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নৈতিকবিজ্ঞানী, যুক্তিবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজবিশ্লেষক, অহিংসবাদী, নিখাঁদ ও সাহসী সমালোচক এবং একজন যুদ্ধবিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি মাত্র দু’বছর বয়সে মা-বাবাকে হারান এবং মাতামহের কাছে তিনি লালিত-পালিত হন। তাঁর কঠিন, কষ্ট, যন্ত্রণাবিদ্ধ দুঃখময় সংগ্রামী জীবন সর্বদাই সুখ ও শান্তির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে।
তাঁর অহিংসদ সুনীতি, আদর্শ ও সততার প্রশ্নের বলিষ্ঠ ও আপসহীন থাকার কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বৃটিশ সরকার তাঁকে জেল-বন্দী করেন। তিনি বিগত বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বে একজন শ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক হিসেবে পরিচিত লাভ করেন।
(১৮ মে ১৮৭২ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০) ছিলেন একজন ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজকর্মী, অহিংসাবাদী, এবং সমাজ সমালোচক.যদিও তিনি ইংল্যান্ডেই জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন, তার জন্ম হয়েছিল ওয়েলস এ, এবং সেখানেই তিনি ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রাসেল ১৯০০ সালের শুরুতে ব্রিটিশদের আদর্শবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তাকে বিশ্লেষণী দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিবেচনা করা হয়, এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন তার শিষ্য ভিটগেনস্টেইন এবং পূর্বসূরি ফ্রেগে এবং তাকে ২০ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম যুক্তিবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাসেল এবং হোয়াইটহেড একত্রে প্রিন্কিপিয়া ম্যাথমেটিকা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তারা গণিতকে যুক্তির ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। তার দার্শনিক নিবন্ধ "অন ডিনোটিং" দর্শনশাস্ত্রে মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। দুটো গ্রন্থই যুক্তি, গণিত, সেট তত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব এবং দর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত যুদ্ধবিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং জাতিসমূহের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। রাসেল তার অহিংস মতবাদ প্রচারের জন্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জেলবন্দী হন, তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান, সোভিয়েত টোটালিটারিয়ানিজম এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণের সমালোচনা করেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। রাসেল ১৯৫০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, যা ছিল "তার বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ রচনার স্বীকৃতিস্বরূপ যেখানে তিনি মানবতার আদর্শ ও চিন্তার মুক্তিকে ওপরে তুলে ধরেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরোধীর ভূমিকা নেন, ফলস্বরূপ তাঁকে ছ'মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। সেই সঙ্গে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক পদ থেকে বরখাস্ত হন। ১৯৫০ সালে পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই কারণে ১৯৬১ সালে তাঁকে আবার কারাদনণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ১৯৭০ সালে বারট্রান্ড রাসেল মৃত্যুবরণ করেন।