28

গণচীনে ১৭১ দিন

গণচীনে ১৭১ দিন (হার্ডকভার)

জুলাই জাগরণ ২৫ image

পাঠকেরা একত্রে কিনে থাকেন

এই ই-বুক গুলোও দেখতে পারেন

বইটই

বইটির বিস্তারিত দেখুন

কুনমিং এয়ারপোর্ট: আমি ভিআইপি!

সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবে গেছে। তবে আকাশুজুড়ে ছড়িয়ে আছে রক্তিম লাল আভা। এমন সময় আমাদের বহনকারী চীনগামী বিমানটি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আকাশে উড়াল দেয়। চায়না ইস্টার্নের বিমান। যাত্রী প্রায় আড়াইশ’র মতো, ২৪২ জন। মজার ব্যাপার হলো, পুরো ফ্লাইটে আমি একাই বিদেশি। বাকি সবাই চীনা। এদের মধ্যে একজন আমার পরিচিত। আর কাউকে চিনি না। ও কাজ করে ঢাকার চীনা দূতাবাসে। নাম শি শাওহুয়া। ইংরেজি নাম রুবি। চীনাদের এই একটা বিষয় যা অনেকেরই হয়তো অজানা। বিদেশে কাজ করা প্রায় সব চীনাদেরই নিজের চীনা নামের পাশাপাশি একটা ইংরেজি নাম বা যেদেশে কাজ করে সেদেশের ভাষায় নাম থাকে। কারণ চীনা নাম উচ্চারণ করা কষ্টসাধ্য। কাজের সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থা। সে হিসেবেই শি শাওহুয়ার ইংরেজি নাম রুবি। ভিসা নেওয়ার সময়ই রুবির সাথে পরিচয় করে দিয়েছিলেন ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তা জিং চেন। রুবিকে পেয়ে কিছুটা হলেও মনের মধ্যে এক ধরনের আশস্তবোধ কাজ করে। কারণ এত অপরিচিতের মাঝে একজন হলেও তো পরিচিত আছেন। করোনার সময় চীন যাচ্ছি। যাত্রাপথে কোথায় কী হয় বা কী ধরনের অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়, তা নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি তো আছেই। রুবি ছাড়া বাকি যাত্রীরা কাজ করেন বাংলাদেশের মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন চীনা প্রকল্পে। করোনার প্রকোপ বেশি থাকায় গত দুইÑআড়াই বছর দেশে যেতে পারেননি। এখন ছুটি পেয়ে সবাই দেশে পরিজনদের কাছে ফিরছেন।

বিমানের সব আসন ভর্তি। শুধুমাত্র আমার দুই পাশে আসন ফাঁকা। আমি বসেছি বিমানের মাঝামাঝি একেবারে সামনের সারির মাঝখানে। সামনের সারিরই বাম পাশে এককোনায় বসেছে রুবি। পুরো বিমানের অন্য কোথাও কোনো আসন ফাঁকা নেই। অথচ আমার পাশের আসনগুলো ফাঁকা কেন? প্রথমে ভেবেছি, হয়তো যাত্রী না থাকায় এগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো তা কেন হবে? কারণ বাংলাদেশে কাজ করা চীনারা দেশে ফেরার জন্য পাগলপ্রায়। অনেকেই আছেন যারা করোনার কারণে গত তিন বছর ধরে দেশে ফিরতে পারেননি। রুবিও যেমন নিজ দেশে ফিরছে দুই বছর সাত মাস পর। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ফ্লাইট বন্ধ ছিল। সম্প্রতি ফ্লাইট যোগাযোগ শুরু হয়েছে। তবে চীনা নাগরিক ছাড়া আর কারোও যাওয়ার অনুমতি নেই। (২০২২ সালের ১৩ জুন ছিল আমার ফ্লাইট। পরে সেপ্টেম্বর মাসে সবার জন্য ফ্লাইট খুলে দেওয়া হয়)। চীনে কাজ করা বা পড়াশোনা করা বাংলাদেশিরাও ফিরতে পারছেন না। বিধিনিষেধ পুরোটা উঠে গেলে হয়তো তারা ফেরার সুযোগ পাবেন। চাহিদার তুলনায় এখন ফ্লাইটও কম। তাই আমার পাশের আসনগুলো খালির ব্যাপারটা তাৎক্ষণিকভাবে বোধগম্য হলো না। তবে পরে বুঝতে পারি, কেন আসনগুলো খালি ছিল। সে কথায় পরে আসছি।

ঢাকা থেকে কুনমিংয়ে দুই ঘণ্টার ফ্লাইট। কিন্তু চীনের সাথে বাংলাদেশের দুই ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান থাকায় ছয়টায় রওনা হলেও কুনমিংয়ে আমাদের ফ্লাইট পৌঁছায় স্থানীয় সময় রাত ১০টায়। আমাদের তুলনায় চীন দুঘণ্টা এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশে আটটা বাজলেও কুনমিংয়ে বাজে ১০টা। বাইরে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির ঝাপটা এসে লাগে বিমানের জানালায়। বিমানের গা বেয়ে জানালা দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। এরমধ্যেই রানওয়েতে অবতরণ করে বিমান। ল্যান্ড করার পর বেশকিছু সময় অতিবাহিত হয়। কিন্তু কেউ বের হয় না। আমার কাছে খটকা লাগে। বৃষ্টির জন্যই কি বের হচ্ছে না সামনের যাত্রীরা? মিনিট দশেক পর হঠাৎ রুবি আমাকে ইশারায় একজন বিমানবালাকে অনুসরণ করতে বলে। বিমানবালা আগে, আমি মাঝে, পেছনে রুবি। বিমানবালা অনেকটা পথ পরিষ্কার করে যাওয়ার মতো যাচ্ছে, আর আমরা দুজন তাকে অনুসরণ করে চলছি। বাকি যাত্রীরা আমাদের দিকে চেয়ে আছে। তাদের নামতে দেওয়া হচ্ছে না। আমি রুবির দিকে প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে তাকাতেই সে ব্যাপারটা বুঝতে পারে। ও হাসতে হাসতে বলে ওঠ “তুমি আমাদের সরকারি অতিথি। এই ফ্লাইটে তুমিই ভিআইপি। সে কারণে তোমাকে আগে নামানো হচ্ছে।” তাঁর কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারি না। শুধু এটুকু মনে হলো, এ কারণেই কি তাহলে আমার দু’পাশের আসনগুলো ফাঁকা ছিল? নাকি করোনাসংক্রান্ত নিরাপত্তার কারণে আসনগুলো ফাঁকা ছিল?

এবার খোলাসা করছি আমি সরকারি অতিথি কেন। চীনের দেওয়া একটি ফেলোশিপ প্রোগামে অংশ নিতেই এবারের চীন যাত্রা। চায়না পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি এসোসিয়েশন-সিপিডিএ পরিচালিত চায়না ইন্টারন্যাশনাল প্রেস অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার (সিআইপিসিসি)’র ছয় মাসব্যাপী কর্মসূচিতে অংশ নিতে চীন যাত্রা। জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ফেলোশিপ প্রোগ্রামের মেয়াদ। এই কর্মসূচির আলোকে চীনের বিখ্যাত রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধীনে ‘চাইনিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মিডিয়া এক্সচেঞ্জ’ কোর্স সম্পন্ন করি।

বিমান থেকে বের হতেই দেখি, আপাদমস্তক পিপিইতে ঢাকা তিন/চারজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে। আমাকে স্বাগত জানালেন তারা। সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন ইমিগ্রেশন ডেস্কে। সেখানে পৌঁছে পেছনে তাকিয়ে দেখি, বিমানের বাকি যাত্রীদের খানিকটা দূরে আটকে দেওয়া হয়েছে। লাল ফিতা টাঙিয়ে গতিরোধ করা। লালফিতার দৌরাত্ম্য বেচারাদের পিছু ছাড়ছে না। আমার ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়ে বের হয়ে আসার পর ছাড়া হলো তাদের। নিজেকে একটু সম্মানিত মনে হলো। বিদেশের মাটিতে এরকম সম্মান পাওয়া কিছুটা হলেও আনন্দের। অথচ নিজ দেশের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার কী দুর্দশা। সেকথা মনে হতেই মনটা বিষিয়ে ওঠে। এই যেমন আসার সময় শাহজালাল বিমানবন্দরে যে কর্তাব্যক্তিটি আমার ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেছেন তার কথাই ধরুন। বেচারা ফেলোশিপ কী, তাই জানে না। আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করে চললেন কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কতদিন থাকবো? কী করি, সর্বশেষ কোন দেশে গেছি, কবে গেছি, কবে দেশে ফিরেছি, ইত্যকার নানা প্রশ্নে জর্জরিত করতে লাগলেন। কিছু প্রশ্নের উত্তর পাসপোর্টেই আছে। তবু কেন সেগুলো জিজ্ঞাসা করলেন বুঝে আসে না। প্রশ্ন তিনি করতেই পারেন, কিন্তু সেগুলো তো যৌক্তিক হতে হবে। যেমন- কোথায় যাচ্ছি, সবশেষ কোন দেশ থেকে কবে ফিরছি সেগুলোর সিল তো পাসপোর্টেই আছে। পেছনে বহিরাগমন প্রত্যাশী মানুষের বিশাল লাইন। সেদিকে তার কোনো ভ্রƒক্ষেপ নাই। তিনি পাসপোর্ট উলটেপালটে দেখছেন আর প্রশ্ন করছেন। ইচ্ছা করেই যে দেরি করাচ্ছেন বুঝতে কষ্ট হলো না। দশ থেকে পনেরো মিনিট সময় নিলেন। এবার আমি একটু রাগতঃস্বরে তাকে বললাম আপনি এত সময় নিচ্ছেন কেন? সমস্যা কোথায়? শান্ত গলায় তার উত্তর আমাদের তো সবকিছু দেখে যাচাই-বাছাই করতে হয়। শেষে আরেক অফিসারের কাছে পাঠিয়ে নিজের আসন ছেড়ে উঠে গেলেন। যার কাছে পাঠালেন তিনি অবশ্য বেশি সময় নিলেন না, এক মিনিটের মধ্যে কাজ সেরে বিদায় দিলেন। এতক্ষণ আমার জন্য অপেক্ষারত রুবি জিজ্ঞেস করলো কোনো সমস্যা কি না? আমি না সূচক জবাব দিলাম। শুধু মনে মনে ভাবতে লাগলাম, এজন্যই বিদেশগামী সাধারণ মানুষ এত ভোগান্তিতে পড়ে। বিশেষ করে প্রবাসীদের হয়রানির যেন শেষ নাই। নানা অজুহাতে তাদের হয়রানি করা হয়।

ইমিগ্রেশন সম্পন্নের পর আমাদেরকে লাগেজ সংগ্রহস্থলে নিয়ে যাওয়া হলো। লাগেজ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখি, আমার লাগেজের একটা ফিতা ছিঁড়ে গেছে। এটাকে মামুলি একটা ব্যাপার মনে করে লাগেজ নিচ্ছি। এমন সময় উপস্থিত এয়ারলাইন্স কর্মকর্তার ব্যাপারটা চোখে পড়ে। তিনি সাথে সাথে ছেঁড়া ফিতার ছবি তুলে নিলেন। রুবির মাধ্যমে আমাকে জানালেন, আমি ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকা নেব নাকি লাগেজ নেব? আমি তো হতবাক। কী উত্তর দেবো বুঝতে পারছি না। পুরো লাগেজ ঠিক আছে। শুধু একপাশ থেকে একটা ফিতা ছিঁড়ে গেছে। তাছাড়া আমি নিজে তো কোনো ক্লেইম করি নাই। আমি কোনো কথা না বলে রুবির দিকে তাকিয়ে ভাবছি কী বলা উচিত। আমি কিছু বলছি না দেখে রুবি লোকটিকে বললো আমরা হোটেলে গিয়ে জানাব। এরপর লাগেজ নিয়ে বহিরাগমনের দিকে হাঁটা দিলাম। তখনো সামনেÑ পেছনে চীনা কর্মকর্তারা। বাইরে বেরিয়ে দেখি, একটা পাজেরো টাইপ গাড়ি দাঁড় করানো। তাতে উঠেই হোটেল অভিমুখে রওনা দিলাম।


Title গণচীনে ১৭১ দিন
Author
Publisher
ISBN 9789843472397
Edition 1st Published, 2025
Number of Pages 112
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

Sponsored Products Related To This Item

Reviews and Ratings

sort icon

Product Q/A

Have a question regarding the product? Ask Us

Show more Question(s)

Customers Also Bought

loading

Similar Category Best Selling Books

prize book-reading point
Superstore
Up To 65% Off

Recently Viewed

cash

Cash on delivery

Pay cash at your doorstep

service

Delivery

All over Bangladesh

return

Happy return

7 days return facility

0 Item(s)

Subtotal:

Customers Also Bought

Are you sure to remove this from bookshelf?

Write a Review

গণচীনে ১৭১ দিন

ইমরুল কায়েস

৳ 252 ৳350.0

Please rate this product