পলাশীর যুদ্ধ: সত্যের অনুসন্ধানে—এই ইতিহাস গ্রন্থটির সূচনা ও প্রকাশের আড়ালে বেশ কিছু স্মৃতিময় ঘটনা জড়িয়ে আছে। ২০২০ সালের কথা। বিশ্বমানব গোষ্ঠীর ইতিহাসে ভয়াবহ এক দুর্যোগ ঘনিয়ে এসেছিল। এর নাম দেয়া হয় করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। করোনা ভাইরাস,মহামারি, অতিমারী, লকডাউন ইত্যাদি শব্দমালা আমাদের কাছে আতঙ্কের প্রতীক হয়ে উঠে। গোটা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়ে। বাংলাদেশও এই ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত। তখনই আমাদের মাথায় এলো ঘরে বসে কী করা যায়। এগিয়ে এলেন বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সুরুজ। সামনে ছিল জুন মাস। ২৩ জুন। ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের কয়েকজন উদ্যোক্তা আমরা মিলিত হলাম। আলোচনা করলাম এই সংগঠনের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সঙ্গে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হলো এই মহামারিকালে ঘরে বসেই একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করার। আয়োজনের কর্মযজ্ঞ শুরু হলো। সহযোগী হিসেবে সানন্দে যুক্ত হলো বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। পলাশীর যুদ্ধ: সত্যের অনুসন্ধানে প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আয়োজন করা হল চার দিনের আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার। এই সম্মলনে ৪টি দেশ থেকে ১০ জন খ্যাতিমান গবেষক অংশ নেন। বিশ্বজুড়ে ভয়ংকর মহামারির প্রবল লকডাউনে মানুষকে সচেতন করা এবং নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের আলোকে আলোকিত করা ছিল এই আয়োজনের একটি উদ্দেশ্য।
দিন যায় দিন আসে। ইতিহাস ঘটনাবলিও নিত্য নতুন উপাত্ত নিয়ে পুনর্বিন্যাসের আয়োজন চলে। বাঙালির ইতিহাসের বড় একটি ট্রাজেডির জায়গা হলো ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধ। পলাশীর যুদ্ধ ও এর ফলাফল ছিল বাংলা জনপদের মানবগোষ্ঠীর ভাগ্য বিপর্যয়ের দীর্ঘ ইতিহাস। যুদ্ধটি ছিল একদিনের। কিন্তু নানামাত্রায় ছড়িয়ে ছিল দীর্ঘ ষড়যন্ত্র। এই যুদ্ধে শুধু একজন শাসকের পরিবর্তন হয়নি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পালায় শুরু হয় উপনিবেশিক শাসন। শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় সব ক্ষেত্রে আসে পরিবর্তন। ইতিহাস পাল্টানোর মহাপরিকল্পনা চলে। এ পরিকল্পনা শুরু করা হয় দেশীয়দের হাত দিয়েই। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে লম্পট ও চরিত্রহীন হিসেবে তুলে ধরে পলাশীর যুদ্ধ বৈধকরণ নিয়ে সাজানো হয় মিথ্যা ইতিহাস। শুরু হয় নানা বানোয়াট ও বিকৃত ইতিহাস রচনার পালা। এই ইতিহাস রচনা করেছে পলাশী যুদ্ধের ফলভোগী লেখক ও বুদ্ধিজীবীগণ। এ নিয়ে নানা মিথের সৃষ্টি ও কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে। ইংরেজ বেনিয়াদের তৈরি নগরী হয় কলকাতা। এখানে গড়ে ওঠে হলওয়েল মনুমেন্ট। অন্ধকুপ হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিস্তম্ভ। বলা হয়, এটা নবাব সিরাজের দুষ্কর্মের প্রতীক। দিন যায় এভাবেই। গত শতকের চল্লিশের দশকে আরেক জাতীয়তাবাদী নেতা সুভাসচন্দ্র বসু বাঙালির জন্য কলঙ্কস্বরূপ এই স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙার আন্দোলন শুরু করেন। একইভাবে শুরু হয় সিরাজের ইতিহাস নিয়ে নতুন অনুসন্ধান। তার আগেই এগিয়ে আসেন অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়। রচনা করেন সিরাজউদ্দৌলা। দৃশ্যপট পাল্টে দেয়ার সুযোগ আসে। পলাশী যুদ্ধ এবং নবাব সিরাজকে নিয়ে নতুন করে চিন্তার করার সূত্রপাত ঘটে। পলাশীর পূর্বাপর ষড়যন্ত্র এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রতি পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে এই দুই বাঙালির বিশেষ কৃতিত্ব স্বীকার করতে হয়। কিন্তু যে বানোয়াট ইতিহাস প্রচলিত হয়ে আছে, তা খণ্ডন করা এবং সে সময়ের রাজনীতি ও সমাজ, সামন্তগোষ্ঠীর প্রকৃতি, অভ্যন্তরীণ গৃহষড়যন্ত্র, পলাশী ষড়যন্ত্রে ইংরেজদের সুদূরপ্রসারী ভাবনা এবং তরুণ নবাবের দূরদর্শিতা ও দেশ প্রেম নিয়ে নতুন করে অনুসন্ধানের আরও গভীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ইংরেজ কোম্পানির কথায় কথায় মিথ্যা ও ছলচাতরি এবং দেশীয় অমাত্যদের নবাব বিতাড়নের অশুভ পরিকল্পনা হয়েছে যথেষ্ট। নবাবের চরিত্র ও শাসন নিয়ে হয়েছে নানা অপপ্রচার। অথচ এ কথা ইংরেজ লেখকরাও স্বীকার করেছে যে, নবাব সিরাজউদ্দৌলার দেড় বছরের শাসনে কখনো তিনি মিথ্যার আশ্রয় নেয়নি। করেনি কখনো ছলচাতুরী। ইংরেজদের সঙ্গে নবাবের সন্ধি হয়েছে, কথা হয়েছে, আবার লোভী, বিবেকহীন ইংরেজরাই পরক্ষণে তা অবলিলায় ভঙ্গ করেছে।
হালে গবেষণায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে, গত হয়েছে সুবিধাভোগী পাত্রমিত্র। ফলে বাঙালি পাঠক মনে পলাশীর যুদ্ধ ও ভাগ্যহত তরুণ নবাবকে নিয়ে উত্সাহের কমতি নেই। নতুন কিছু অনুসন্ধানের খোঁজে আমরাও ভাবছিলাম। আমার নিজেরও ছিল ভীষণ আগ্রহ। কিশোর ও যৌবন বেলায় সিরাজউদ্দৌলা যাত্রাপালা, নাটক আর বাংলা সিনেমায় সিরাজউদ্দৌলাকে দেখে ভাগ্যহত নবাবের প্রতি আমারও কৌতুহল সৃষ্টি হয়। তারপর ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করতে এসে সিরাজউদ্দৌলাকে ভিন্নভাবেই চিন্তা করি। কিন্তু একক কোন রচনা বা গ্রন্থ দিয়ে সেই সময়কালের রাজনীতি, নবাব সিরাজউদ্দৌলা আর পলাশীকে সঠিক ধারণা করা কঠিন। আমার কাছে তা-ই মনে হলো। সেই ভাবনা থেকেই বিশিষ্ট গবেষকদের নিয়ে এই বিশেষ বিষয়ের আয়োজন। তাই আমরা এই সেমিনারের নামকরণ দিয়েছি, পলাশীর যুদ্ধ: সত্যের অনুসন্ধানে। চার দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে দেশ-বিদেশের গবেষকগণ নিত্য নতুন আলোচনায় বেশ প্রাণবন্ত করে রেখেছিল দর্শক ও শ্রোতাদের। জাতীয় পর্যায়ে বেশ আলোচিত হয় এই সেমিনার। এই সম্মেলনে নির্ধারিত প্রবন্ধ পাঠে অংশ নেন অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ, অধ্যাপক ড. গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ইরানের ইয়াজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কাজেম কাহদুয়ি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমিত আল রশিদ, ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশীষ কুমার দাস, মুর্শিদাবাদ থেকে অধ্যাপক ড. খয়রুল আনাম এবং লেখক ও শিল্পী সলিল চৌধুরী, যুক্তরাজ্য থেকে গবেষক প্রিয়জিৎ দেবসরকার। আমিও এই তৃতীয় দিনে অধিবেশনে একটি নির্ধারিত প্রবন্ধ পাঠে অংশ নিই।
সমাপনী অধিবেশনে অংশ নেন বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিশিষ্ট নাট্যকার, অভিনেতা ও লেখক ড.ইনামুল হক এবং প্রধান উদেষ্টা জাকির হোসেন (অতিরিক্ত সচিব), বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবেদা সুলতানা, ডা. আহমেদ হেলাল, নুরুন আখতার, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সুরুজ, প্রশিক্ষক কাজী সামিও শীশসহ প্রমুখ।
দেশ বিদেশের গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত হয় এই পলাশীর যুদ্ধ: সত্যের অনুসন্ধানে শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার। অজস্র উত্সাহী শ্রোতা দর্শক দেশ বিদেশ থেকে এই চার দিনের অধিবেশনে অংশ নিয়ে আমাদের অবাক করে দেয়। তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই নিয়ে প্রবল আগ্রহ ও প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। অনলাইন বা ওয়েবিনার হওয়াতে নানা শিরোনামে পলাশীর ঘটনাকে নিয়ে সাজানো গবেষকের প্রবন্ধগুলো ইতিহাস আগ্রহী মানুষকে অভাবনীয় আকৃষ্ট করে।
চারদিনের অধিবেশন সফলভাবে সমাপ্ত হওয়ার পর আমরা দেখলাম, পঠিত প্রবন্ধমালা ইতিহাসের বড় একগুচ্ছ দলিল। এও ভাবলাম, পলাশীকে নানা আঙ্গিকে দেখা প্রবন্ধগুলো প্রবন্ধকারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে গ্রন্থাকারে সাজালে ইতিহাসের বড় একটি দলিল রক্ষিত হয়। সে উদ্দেশ্য নিয়ে লেখাগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করি। এই ব্যাপারে কবি-গবেষক আবু সাঈদ সুরুজ আমাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন। লেখাগুলো আদায় করা বড় সহজ ছিল না। মহামারি কোভিড গেল। জগৎবাসী আবার স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে এল। আমরাও প্রাপ্ত প্রবন্ধগুলো নিয়ে আবার মুদ্রণযন্ত্রের দ্বারস্থ হয়ে গেলাম। এরই বহি:প্রকাশ আজকের এই ঐতিহাসিক দলিল সম্বলিত গ্রন্থখানি। কিন্তু দুঃখও আছে, আছে ব্যর্থতা। দুঃখ হলো এই গ্রন্থ প্রকাশের আগেই আমাদের অংশীজন বিশিষ্ট অভিনেতা ড. ইনামুল হক আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেলেন। ব্যর্থতা হলো খানিকটা বিলম্ব। এরও কারণ ছিল একটি। তা হলো লেখা আদায়ে সময়ক্ষেপন। তারপরও প্রবন্ধ পাঠ যাঁরা করেছিলেন তাঁদের কয়েকজনের পাণ্ডুলিপি আদায় করতে পারিনি। এগুলো আদায় করে ছাপাতে পারলে গ্রন্থটি আরও সমৃদ্ধ হত। কিন্তু বিপদও ছিল। সবগুলো প্রবন্ধ আদায় করে ছাপাতে গেলে হয়তো গ্রন্থটি পাঠকের কাছে এবার পৌঁছাতে আমরা ব্যর্থ হতাম। অতএব, যা আমরা পেলাম তা-ই হাত পেতে নিলাম।
গ্রন্থের শিরোনাম বিগত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যা ছিল তা-ই রাখা হয়েছে। গ্রন্থে সাতজন গবেষকের ৮টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। পলাশীর যুদ্ধ ও সে সময়ের সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে আবর্তিত হয়েছে গবেষণাকর্মটি। কিন্তু বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনায় সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। গতানুগতিক রাজমালা নয়। নতুন করে কিছু অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে। ইতিহাসের শেষ কথাটিরও শেষ নেই। আজ যা ভাবা হয়েছে, কালই কেউ নতুন উপাত্তের নিরিখে ইতিহাসের প্রচলিত ধারার বাঁক ঘুরিয়ে দিতে পারে। এছাড়া বিশাল এক কাল অতিবাহিত হওয়ার পর নতুন করে ভাবার সুযোগও আসে চিন্তাবিদদের মধ্যে। ১৭৫৭ সালের ঘটনার পর গেল ব্রিটিশ যুগ। সে যুগে পলাশী এবং নবাব সিরাজের শাসনকে নিয়ে নানামাত্রায় ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। পলাশীর ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধকে বৈধকরণের প্রয়াস নেয়া হয়েছে দেশি–বিদেশি ঐতিহাসিক ও লেখকদের দ্বারা। সে যুগ গেল। তবে উপনিবেশিক মানসিকতা আর কোম্পানি শাসনের ফলভোগী কলকাতার নব্যশিক্ষিত গোষ্ঠীর মধ্যে সিরাজ বিরোধী যে মানসিকতার সৃষ্টি হয়েছিল, সে ভাবনা ও প্রভাব এখনো দূর হয়েছে বলে মনে হয় না। দূর হয়নি অপপ্রচার ও ইতিহাস বিকৃত করার তত্পরতা। প্রথম পর্যায়ে নবাব সিরাজের ইতিহাস নিয়ে বিকৃত তত্পরতা শুরু করেছিল মুর্শিদাবাদেরই মুসলমান ঐতিহাসিকগণ। তারা নতুন কোম্পানি শাসনকে মেনে নিয়ে পলাশী যুদ্ধের কুশীলবদের আদেশে ফরমায়েশী ইতিহাস রচনা শুরু করেছিল। যাকে বলে ‘নুন খেয়ে গুণ গাওয়া।’ আমার প্রবন্ধে এগুলো এসেছে। সে ধারার তথ্য নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করেছিল ইংরেজ লেখক এবং কলকাতার ইতিহাসবিদ ও লেখক-সাহিত্যিকগণ। তারপর পলাশী ঘটনা নিয়ে নানামাত্রায় ইতিহাস রচনা হলে সেই সূত্র থেকে অনেকেই সরে আসতে চায়নি। এর প্রমাণ দেয়া যায়। সম্প্রতি গোলাম মুরশিদ হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি নামে বিশাল এক ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেছেন। পাঠককূলে সমাদৃতও হয়েছে। তিনিও নতুন গবেষণার দিকে নজর না দিয়ে চরম নবাব বিদ্বেষী এবং ইংরেজ অনুগত সৈয়দ গোলাম হোসেন তবাতবাই এর সিয়ার উল মুতাখে্খরীন আর কবি নবীনচন্দ্র সেনের পলাশী যুদ্ধ নামক কথিত ইতিহাস গ্রন্থের বয়ান থেকে সরে আসতে পারেননি। তিনি লিখেন, আলিবর্দি খানের আদরের নাতি হিসেবে সিরাজ নাকি যৌবনেই বখাটে বনে গিয়েছিল। তার হাতে জগৎ শেঠের মতো ‘ভারতবর্ষের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাংকার’কে দরবার থেকে বের করে দেয়া নাকি সেই বখাটেপনারই কাজ। সিরাজ ছিলেন লম্পট ও নিষ্ঠুর...। (পৃ. ৯০)। সুদের মহাজন জগত শেঠ যে কত ঔদ্ধত্যপনা আর ইংরেজ কোম্পানির সঙ্গে সখ্যতা বজায় রেখে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেখিয়েছেন—তা তো এখন সকলেরই জানা। অথচ দেড় বছরের শাসনে নবাব চারদিকে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। গৃহে খালা, দরবারে মির জাফর, উমিচাঁদ, জগত শেঠ, আর বাইরের লম্পট রবার্ট ক্লাইভ ও মারাঠা দস্যুর আক্রমণ। তারপরও কীভাবে এইগুলো মোকাবেলা করেছিলেন এর মূল্যায়ন হয়নি। আসল ঘটনা কী ছিল এ সব অপপ্রচারের মূলে? তারই অনুসন্ধান করা হয়েছে আলোচ্য আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার যুক্ত গবেষকগণ। আর এরই ফল মুদ্রিত এই গ্রন্থ। আশা করি পাঠক সমাজ অনেক কিছু নতুন করে ভাবার সুযোগ পাবেন এই প্রবন্ধগুলো থেকে। এও ভরসা আছে যে পাঠক মহলে গ্রন্থটি সমাদৃত হবে।
করোনাকালীন আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের অনেক সহকর্মী বন্ধু যুক্ত ছিলেন। তাদের কর্মতত্পরতা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। একই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সেমিনারে অংশগ্রহণকারী গবেষক-প্রবন্ধকারদের প্রতি। তাদের মূল্যবান লেখা নিয়েই এই গ্রন্থের জন্ম।
ড. মো. এমরান জাহান
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি