মোবাশ্বের ওর এতদিনের উপার্জন চারটা সার্টিফিকেট একটা ফাইলে বন্দি করে বসে আছে ইন্টারভিউর জন্য ওয়েটিং রুমে। এখানে মোট বত্রিশ জনকে ডাকা হয়েছে। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে মেশিন অপারেটর পদে চাকরির জন্য আজকের এই বোর্ডের আয়োজন। এখানকার যে কয়েকজনের সাথে ওর কথা হয়েছে তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন পলিটেকনিক্যাল থেকে পাশ করা ছেলে। ওরা মেশিনারি পার্টসের বিষয়ে বেশ ভালো জ্ঞান রাখে কিন্তু মোবাশ্বেরের সেই জ্ঞানটুকু নেই তা আন্দাজ করে মনটা ছোটো হয়ে আছে। ইতিহাসে মাস্টার্স করেছে জেলা সদরের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাড়ি থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকটা প্রাইভেট পড়িয়ে অল্প কিছু আয় রোজগার হতো কিন্তু চাকরির নেশায় যেদিন থেকে ঢাকা এসেছে সেদিন থেকে ওই পথে রোজগার বন্ধ। ফার্মগেটের এক মেসে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে কিন্তু সেই মানবেতর জীবনের গল্প কাউকেই, এমন কী নিজের মা বাবাকেও বলতে পারেনি। নিজের জমানো টাকা শেষ হয়েছে যে কবে সেই হিসাবটাই তো বাবা মা জানেন না। তারা এখনও হয়তো ধরে বসে আছে “মোবাশ্বের পকেট ভইরা টেকা নিছে ঢাকায় যাওনের কালে।”
ইন্টারভিউতে বসার জন্য একটা ভালো শার্ট প্যান্ট টাই, জুতা কিনতেই যে অর্ধেক শেষ সেই হিসাবটিও কেবল নিজের কাছেই জমা আছে । চার চারটা সার্টিফিকেটের মালিক কী আর যেন তেন কাজ করতে পারে? এমন অহংবোধ দেয় না ওকে দিনের আলোয় এমন কোন কাজ করতে যে কাজে ওর সার্টিফিকেটের গায়ে দাগ লাগতে পারে। তাই রাতের আধারেই ছুটে টুকটাক যে কাজ পায় তা করে পেট বাঁচাতে। ঘণ্টা ধরে কয়দিন রিকশাও টেনেছে কিন্তু রাস্তাঘাট ভালোমতো না চেনায় শুধু ঠকেছে বলেই ওর ধারণা। তারপর পেসেনঞ্জারের গালাগালিগুলো রীতিমতো বড়োই আত্মসম্মানকে কাঁদিয়েছে। এরপর সারারাত গা ব্যথা পা ব্যথাতে তো ভুগেছেই সে কথা আর না মনে করলেও চলবে।
সায়লা সুলতানা লাকী ১৯৭৬ সালের ২৬শে আগষ্ট, ঢাকায় জন্ম গ্রহন করেন। লেখিকার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার ধাইদা গ্রামে ছিল যা এখন নদী গহ্বরে বিলীন হয়ে গেছে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। বাবা আব্দুল লতিফ চাকলাদার সরকারি চাকরিজীবি ছিলেন। সেই সুবাদে ময়মনসিংহেও কেটেছে জীবনের কিছুটা সময়। মা মরহুমা শামসুন্নাহার নিহার ছিলেন খুবই শিল্পীমনা একজন মানুষ। তাঁর কাছ থেকেই গল্পের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয় লেখিকার। পড়াশোনা তাঁর খুব ভালো লাগে। শিক্ষা জীবনে প্রানিবিদ্যায় বিএসসি (অনার্স) ও এমএসসি (ফিশারিজ) সম্পন্ন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানীবিদ্যা বিভাগ হতে ফিশারিজে এম ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।