প্রাক-ব্রিটিশ আমল এবং ব্রিটিশ আমলে বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস পরস্পর বিপরীতমুখী। সুলতানী ও মুঘল আমলে মুসলমান সমাজ যতটা অগ্রগতি সাধন করতে পেরেছিলো, ব্রিটিশ আমলে তা থমকে যায়। ব্রিটিশ শাসনের প্রথমার্ধে ব্রিটিশ শাসকদের শাসননীতি সম্পূর্ণভাবে হিন্দু জনগোষ্ঠীর পক্ষে গিয়েছিলো এবং তারা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছিলো। এর ফলে অটোমেটিক বাংলার মুসলমান সমাজের অবস্থান রাষ্ট্রীয় জায়গায় তো বটেই, সামাজিকভাবেও ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছিলো।
রাষ্ট্রে নিজেদের হিস্যা বুঝে নিতে এবং সামাজিকভাবে নিজেদের পুনর্গঠন করতে বাংলার মুসলমানের জন্য জাগরণ / পুনর্জাগরণ ছিল একপ্রকার অনিবার্য। এই অনিবার্য জাগরণের সূচনা হয় ১৮৫৭ সালের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম সিপাহী বিদ্রোহের পর। সশস্ত্র সংগ্রাম সাময়িকভাবে ব্যর্থ হবার পর মুসলমানদের প্রায় সকল পক্ষ একমত হয় যে, সামাজিকভাবে নিজেদের পুনর্গঠন করে রাষ্ট্রীয় হিস্যা নিশ্চিত না করতে পারলে মুসলমানদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। ভাষা, সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সংগঠন— সর্বোপরি সকল উপায়েই চেষ্টা শুরু হলো। স্যার সৈয়দ আহমদ লিখে, বক্তৃতা দিয়ে মুসলমানদের বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ইংরেজদের ভাষা, রাষ্ট্রনীতি কবুল করে নিয়েই মুসলমানদের এগিয়ে যেতে হবে। মুসলমান সমাজে যতজনই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন ও সরকারের সাথে যুক্ত ছিলেন প্রায় সবাই এই নীতি কবুল করে নিয়েছিলেন। বাংলায় এই নীতির বাস্তবায়নে সিরিয়াসলি কাজ শুরু করেছিলেন নবাব আবদুল লতিফ।
এভাবেই বাংলার মুসলমানদের সামাজিক পুনর্গঠন ও রাষ্ট্রে নিজেদের হিস্যা বুঝে নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়, উনিশ শতকের শেষদিকে। ঠিক তখনই হিন্দু সমাজের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয় গো-রক্ষিণী সভা, গো-রক্ষা আন্দোলন—