গীতা একটি পূর্ণাঙ্গ যোগগ্রন্থ, তাই যোগ না জেনে গীতাচর্চা কতটা সমীচীন ভেবে দেখা উচিত। যোগসাধনার মূল বিষয় বা উপাদান দেহ। অনেকে বলে থাকেন, গীতাকে যদি দেহতাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় যুক্ত করা যায় তাহলে তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কমে যেতে পারে। আমি সেই তত্ত্ববেত্তাদের ভেবে দেখতে বলবো। দেখুন সৌরজগতের গঠন বৈজ্ঞানিক ভাবে (কোপার্নিকাস ১৫৩২ সাল) যেদিন থেকে জানা গেছে, তার অনেক পরে মাত্র ১৯১১ সালে রাদাফোর্ড পরমাণুুর গঠনও সেই সৌরজগতের গঠনের মতো এই বলে একটি মডেল করেন ও পরে তা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাতে কি সৌরজগতের অস্তিত্বের কোন ক্ষতি হয়েছে? দুটির অস্তিত্বই একই ভাবে বর্তমান আছে যার উপর আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত। বরং তাতে স্রষ্টার সৃষ্টি তত্ত্বের মহিমা মাধুর্য্য সাদৃশ্য প্রকাশিত হয়েছে। অসীম বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যে সীমানা জেমস্ টেলিস্কোপেও পাওয়া যায় না, আমাদের দেহ তেমন একটি মিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধরা হয়েছে ও তার পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। তাতে মূল ব্রহ্মাণ্ডের কোন ক্ষতি, অবমাননা বা ঘাটতি পড়ে না। পদার্থবিদ্যায় ক্লাসিক্যাল মেকানিক্সের সূত্রগুলো সাব-অ্যাটোমিক পার্টিকেল সমূহের ব্যাপারে প্রযুক্ত নয়, খাটেও না, তার জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সূত্রের প্রয়োগ করতে হয়। যা একই সময়ে বর্তমান। উভয়ই পদার্থ বিজ্ঞানের আধুনিক শাখা এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রযুক্ত হচ্ছে, কেউ কাউকে খাটো করছে না।
তাই গীতা মহান গ্রন্থ, যেন অঙ্কের মত, যে কোন দিক থেকে ব্যাখ্যা করা যাক না কেন, একই ফল ও সমাধান দেয়। গীতার ঐতিহাসিক স্থানগুলো এবং পাত্র মিত্ররা (৫৮ জন) যেমন প্রমাণিত সত্য। যা এই গ্রন্থের শেষ দিকে একটি অধ্যায় হিসেবে যুক্ত হলো। তেমন মানব দেহের অভ্যন্তরস্থ কাল্পনিক চক্র, প্রাণ প্রবাহের নাড়ীগুলোর বর্ণনা ও দেহকে মিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সাথে তুলনা, বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমান্তরালে মানুষের মঙ্গলার্থে নীরোগ শরীর ও সুস্থ মানসিকতা গঠন, সর্বোপরি শান্তির সমাজ ও বিশ্ব নির্মাণে সহায়ক। তাই মনে হয় যোগতত্ত্বের (দেহতত্ত্বের) ব্যাখ্যা ছাড়া গীতার ব্যাখ্যা অসম্পূর্ণ। সমালোচকদের যেসব প্রশ্নের উত্তর ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা দ্বারা দেয়া সম্ভব হয় না বিজ্ঞানের সঙ্গেও মেলে না, (যেমন চন্দ্র নক্ষত্রদের অধিপতি ১০/২১ নং. শ্লোক বা চতুর্যুগে ব্রহ্মার বয়স ৮/১৭ ইত্যাদি) দেতহাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় তা অতি সহজেই দেয়া সম্ভব। আর যেসব সমালোচক গীতাকে সাম্প্রদায়িক গ্রন্থ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে খুনের হুকুম দাতা হিসেবে প্রচার করেন তাদেরও জবাব এই যোগ তত্ত্বের ব্যাখ্যা দ্বারা সঠিক ভাবে দেয়া সম্ভব। আর আধুনিক জড়বিজ্ঞান শুধু বস্তুরই ব্যাখ্যা দিতে পারে প্রাণের বা চৈতন্যের নয়। আর যোগবিদ্যা পরা-অপরা দুই বিষয়েরই ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে অন্তঃকরণের কোন সংজ্ঞা বিজ্ঞানে নেই, কিন্তু এখানে চারধাপে (মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার, চিত্ত) তার অস্তিত্বের ব্যাখ্যা আছে। আশাকরি তত্ত্বজ্ঞানী পাঠকগণ এর গুরুত্ব অনুধাবন করবেন।