বিশ্বসাহিত্যে মাত্র চারখানা মহাকাব্য আছে। তন্মধ্যে দুটি ভারতীয় উপমহাদেশে সংস্কৃত ভাষায় রচিত আর দুটি গ্রিসে গ্রিক ভাষায় রচিত। চারটি জাত (ধঁঃযবহঃরপ) মহাকাব্যের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ হচ্ছে মহাভারত। ‘ভারতীয় মহাবংশ চরিত ও কুরু-পা-বীয় যুদ্ধ বর্ণনাত্মক কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাসকৃত মহাকাব্য’ (পৌরাণিক অভিধান, পৃ. ৪২৩) হচ্ছে মহাভারত। মহাভারতকে পঞ্চম বেদ বলা হয়। এটি আঠারটি পর্বে এবং একশত পর্বাধ্যায়ে বিভক্ত। এতে শ্লোক সংখ্যা এক লক্ষ। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস বদরিকাশ্রমে তিন বৎসরে এই মহাগ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটি রচনা করার আগে ব্যাসদেব ব্রহ্মাকে বলেছিলেন, ‘তিনি এইরূপ পবিত্র কাব্য রচনা করবেন-যাতে বেদের নিগূঢ়তত্ত্ব, বেদ-বেদাঙ্গ ও উপনিষদের ব্যাখ্যা, ইতিহাস ও পুরাণের প্রকাশ, বর্তমান, ভূত, ভবিষ্যৎ এই তিনকালের নিরূপণ, জরা মৃত্যু, ভয়, ব্যাধি, ভাব ও অভাবের নির্ণয়, বিবিধ ধর্মের ও বিবিধ আশ্রমের লক্ষণ, ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়, বৈশ্য-শূদ্র-এই চতুর্বর্গের নানান পুরাণোক্ত আচার বিধি, তপস্যা, ব্রহ্মচর্য, পৃথিবী, চন্দ্রসূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, তারা ও যুগপ্রমাণ, ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, আত্মতত্ত্ব-নিরূপণ, ন্যায় শিক্ষা, চিকিৎসা, দানধর্ম, পাশুপত ধর্ম এবং যিনি যে কারণে দিব্য বা মানব যোনিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, তার বিবরণ, পবিত্র তীর্থ, দেশ, নদী, পর্বত, বন, সমুদ্র, দিব্যপুরী, দুর্গ, সেনার ব্যূহ রচনাদি কৌশল ইত্যাদি কথিত হবে। অথচ যিনি অখিল সংসার ব্যাপিয়া আছেন, সেই পরম ব্রহ্মই প্রতিপাদিত হবেন।’ (পৌরাণিক অভিধান, পৃ. ৪২৩) এশীয় প-িতদের মতে মহাভারতের রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে কিন্তু পাশ্চাত্য প-িতদের মতে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় থেকে পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যে মহাকাব্যটি রচিত। বিশ্বের প্রধান প্রধান ভাষায় গ্রন্থটি অনূদিত হয়েছে।