বই পরিচিতি :
কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য ও স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। তাঁকে 'নির্জনতার কবি', 'প্রকৃতির কবি', এবং 'আধুনিক কবিতার পথিকৃৎ' হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।
জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতিকে দেখেছেন ভিন্ন দৃষ্টিতে-তিনি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, তার অন্তর্নিহিত রহস্য, নৈঃশব্দ্য ও বিষণ্ণতাকে উপলব্ধি করেছেন। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি যেন জীবন্ত চরিত্র হয়ে ওঠে।
জীবনানন্দ দাশের কবিতা এক গভীর নির্জন আত্মবিশ্লেষণের পথ। তিনি মানুষের একাকীত্ব, অস্তিত্বের সংকট এবং নিঃসঙ্গতাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন।
জীবনানন্দ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের আধুনিক কবিদের একজন। তাঁর কবিতায় বিশ শতকের নগরজীবনের সংকট, সভ্যতার ক্লান্তি এবং অস্তিত্ববাদী ভাবনা প্রবলভাবে উপস্থিত।
তাঁর ভাষা অননুকরণীয়- কবিতায় ব্যবহৃত শব্দচয়ন, ছন্দের ভাঙচুর এবং ইমেজ বা চিত্রকল্প গঠনে তিনি সম্পূর্ণ নতুন এক কাব্যভাষা তৈরি করেন।
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বারবার ফিরে আসে স্মৃতি, স্বপ্ন ও মৃত্যু। তাঁর কবিতায় সময় একটি চক্রাকারে ফিরে আসে, যেখানে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ একাকার হয়ে যায়।
জীবনানন্দ ছিলেন প্রচারবিমুখ, অন্তর্মুখী এক কবি। তাঁর ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতা এবং মনের জটিলতা কবিতায় গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যভাষায় এমন এক মাত্রা সংযোজন করেন যা পূর্ববর্তী কোনো কবির কবিতায় পরিলক্ষিত হয়নি। তিনি প্রকৃতি, অস্তিত্ব ও কালের এমন এক অনুভব তৈরি করেন, যা তাঁকে সত্যিকারের অনন্য করে তোলে।
এই গ্রন্থের গ্রন্থকার মাহমুদ শফিকের প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ। জীবনানন্দ দাশের কবিতা ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে তাঁর রয়েছে বিপুল আগ্রহ। জীবনানন্দকে নিয়ে তাঁর লেখালেখি, গবেষণার পরিমাণও কম নয়। এরকম কিছু নির্বাচিত রচনার সংকলন এই গ্রন্থ 'জীবনানন্দ দাশ মাঘ নিশীথের কোকিল'।
গ্রন্থকার পরিচিতি :
মাহমুদ শফিকের জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৪।
জন্মস্থান: নড়িয়া, নানার বাড়ি, নিজগ্রাম: মগর,
উপজেলা: নড়িয়া, জেলা: শরিয়তপুর।
বাবা দীল মোহাম্মদ, মা সখিনা বেগম।
কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও মাহমুদ শফিকের অনেকগুলো গবেষণা ও প্রবন্ধগ্রন্থ রয়েছে। তিনি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। তাঁর লেখার পরিমাণ বিপুল।
সত্তর দশকের অন্যতম প্রধান কবি মাহমুদ শফিক পেশায় একজন সাংবাদিক।
তাঁর স্ত্রী নাজমা শফিক। মেয়ে কাশফিয়া শফিক। তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।