“সংবাদপত্রে একাত্তরের স্বাধীনতা” বইটি মুহাম্মদ সাজাহান সিরাজীর একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাধর্মী গ্রন্থ, যেখানে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংবাদপত্রগুলোর ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বইয়ে লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে তখনকার সংবাদপত্রগুলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, কীভাবে তারা তথ্য পরিবেশন করেছে, এবং কীভাবে জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে গণমাধ্যম প্রভাব ফেলেছিল।
সারমর্ম:
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বইটির শুরুতেই পাকিস্তানি শাসনের অধীন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কীভাবে গড়ে উঠল, সেটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
সংবাদপত্রের ভূমিকা: বইয়ের মূল অংশজুড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংবাদপত্রগুলোর বিশ্লেষণ। যেমন:
পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো (যেমন: দৈনিক পাকিস্তান, সংবাদের নাম উল্লেখ করে)
প্রবাসী ও মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর (যেমন: জয় বাংলা, মুক্তি ইত্যাদি) মুক্তিযুদ্ধপন্থী ভূমিকা
কলকাতা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদন কীভাবে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি তুলে ধরেছিল
তথ্যপ্রবাহ ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ: বইটি ব্যাখ্যা করে কীভাবে সংবাদপত্রের মাধ্যমে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালানো হয়েছিল। যেমন—প্রচার-প্রচারণা, গুজব রটানো বা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস বাড়ানো।
তথ্যসংগ্রহ ও উপস্থাপনা: লেখক অসংখ্য সংবাদের উদ্ধৃতি, সম্পাদকীয় ও রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে তথ্যসমৃদ্ধভাবে বইটি সাজিয়েছেন, যা বইটিকে একটি মূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ: শুধু তথ্য উপস্থাপন নয়, লেখক বিশ্লেষণ করেছেন কোন সংবাদপত্র কীভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছিল বা পাকিস্তান সরকারের প্রোপাগান্ডা চালাতে সাহায্য করেছিল।
উপসংহার:
এই বইটি শুধু একটি গবেষণাধর্মী কাজ নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল। এটি পাঠককে ১৯৭১ সালের ঘটনাপ্রবাহকে সংবাদমাধ্যমের চোখ দিয়ে দেখার সুযোগ করে দেয়।