প্রাচীন গ্রীস ইতিহাস বলতে বুঝতো 'বিশ্লেষণ' এবং 'প্রকৃত ঘটনার বর্ণনা'। আমরা বলি, ইতিহাস হলো বিজ্ঞান। সেই বিজ্ঞান যার দ্বারা বিশ্লেষণ করে বোঝা যাবে মানুষ কীভাবে জীবনধারণ করেছে, তাদের শ্রম কীভাবে পৃথিবীর রূপ পাল্টিয়ে দিয়েছে এবং তাদের নিজেদের জীবনধারাও কি করে ও কেন ক্রমশ পরিবর্তিত হতে হতে আজকের এই বিশেষ রূপ লাভ করেছে।
প্রত্যেকটি দেশের ইতিহাস আসলে বিশ্ব-ইতিহাসেরই একটা অংশমাত্র, অংশ সারা পৃথিবীর মানবেতিহাসের।
এখন এই বইটিতে তোমরা যা পড়তে যাচ্ছ তা হলো বিশ্ব-ইতিহাসের প্রথমাংশ-প্রাচীন পৃথিবীর ইতিহাস-বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গের বৃহদায়তন প্রথম একটি বিভাগ। সুদূর অতীতে মনুষ্যজীবন কেমন ছিল তারই কাহিনী।
কিন্তু হাজার কি লক্ষ বছর আগে মানুষ কেমনভাবে জীবনধারণ করতো তা আমরা জানবো কোথেকে?
পৃথিবীর বুকে মানুষের জীবন সব সময়েই 'পায়ের চিহ্ন' রেখে গেছে, এর ব্যতিক্রম কখনো ঘটে নি। এই 'পদচিহ্ন' ধরে ধরে পথ চলে বিজ্ঞানীরা জেনেছেন দূর অতীতে মানুষের জীবন সত্যিই কীরকম ছিল।
'মুক চিহ্নের ভাষা'। সুদূর প্রাচীন কালেও মানুষ তাদের জীবনযাত্রার কাহিনী লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছে, বিভিন্ন ঘটনার তথ্যও। তারা লিখে গেছে গাছের বাকলে, পাথরের উপরে, মসৃণ পশুচর্মের উপরে এবং আরো নানান কিছুতে। পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রাচীন যে লেখাটি পাওয়া গেছে সেটি লিপিবদ্ধ হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে। (৪৪-৪৫ পৃষ্ঠায় 'কালপঞ্জী' দেখ। লক্ষ্য করো, প্রত্যেক বিভাগের মধ্যে সহস্র বৎসরের ব্যবধান।)
অবশ্য প্রাচীন লিপি পাওয়া গেছে খুব কম। উপরন্তু আছে লিপি পাঠোদ্ধার করার সমস্যা। বহু লিপি রচিত হয়েছে শুধুমাত্র চিহ্ন দিয়ে, যা বর্তমানে কেউ কোথাও ব্যবহার করে না। এমন সব চিহ্ন লেখা হয়েছে এমন সব ভাষায় যে ভাষায় বহু পূর্ব থেকেই কেউ কোথাও কথা বলে না। তবু বিজ্ঞানীরা প্রাচীন পৃথিবীর বেশির ভাগ মানবগোষ্ঠীর লিপি পড়ে উঠতে পেরেছেন। পূর্বে অবোধ্য মূক লিপিচিহ্নও আজ আমাদের কাছে 'কথা বলে উঠেছে'। তারা বলেছে সুপ্রাচীন অতীতের মহাবিক্রমশালী রাষ্ট্রের কথা, বলেছে গণ-অভ্যুত্থানের কথা, জ্ঞানবিজ্ঞানের উদ্ভব সম্বন্ধে এবং আরো বহু জিনিস সম্বন্ধেই আমাদের অবহিত করেছে এইসব প্রাচীন লিপি।
যে সমস্ত লিপি থেকে বিজ্ঞানীরা ইতিহাস সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করতে পেরেছেন, সেগুলোকে বলা হয় লিখিত ইতিহাসের আকর-উপাদান অথবা ঐতিহাসিক দলিল। এরকম কয়েকটি উৎসস্থল বা দলিলের বিষয়বস্তুর সাথে তোমরা এ গ্রন্থে পরিচিত হবে।