ইসরাইলঃ
প্যালেস্টাইনে তথাকথিত ‘সংঘাত’ কেন শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলছে এবং এর কোনো সমাধান এখনো দিগন্তে দেখা যাচ্ছে না—এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে সুয়ারেজ এমন এক বিশাল দলিলভাণ্ডার খুঁজে দেখেছেন, যা এর আগে খুব কমই গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হয়েছিল। প্রচলিত গণমাধ্যমে যেভাবে এটিকে আরব বনাম ইহুদি দ্বন্দ্ব হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, তিনি সেই বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। ইতিহাসের দলিল-প্রমাণ দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন—যা সৎ ও অবহিত পর্যবেক্ষকের কাছে আজকের বাস্তবতা থেকেও স্পষ্ট—পুরো এই করুণ ইতিহাস আসলে ইউরোপীয় এক বসতি স্থাপনকারী আন্দোলনের সহিংস দখলদারির গল্প, যা তার লক্ষ্যকে আড়াল করেছে এক ধরনের ‘মেসিয়ানিক অধিকার’-এর ভণ্ড দাবির আড়ালে। এই আন্দোলনের নাম—জায়নবাদ।
আজকের এই আপাত-দুরূহ ও দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা আসলে জায়নবাদের ‘অসমাপ্ত কাজ’— একটি ইসরাইলি রাষ্ট্র নির্মাণ, যা এখনো পূর্ণ হয়নি। মূলত এই ‘সংঘাত’ না জটিল, না অসাধনীয়। কিন্তু এর অবসান ঘটাতে হলে জায়নবাদের ভুয়া বয়ানকে ভেঙে ফেলা অপরিহার্য। সুয়ারেজের প্রচেষ্টা—ঐতিহাসিক দলিল উন্মোচন করে সেই বয়ানকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলা।
বনি ইসরাইল থেকে আজকের ইহুদিঃ
বইটাতে অনুসন্ধান করা হয়েছে প্রাচীন খাজার সাম্রাজ্যের ইতিহাস—এক বিশাল অথচ প্রায় বিস্মৃত শক্তির, যেটা ইউরোপের পূর্বভাগে মধ্যযুগের অন্ধকার সময়ে ইহুদিধর্ম গ্রহণ করেছিল। অবশেষে চেঙ্গিস খানের সৈন্যবাহিনী এই সাম্রাজ্যকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। তবে নানা প্রমাণ ইঙ্গিত দেয়, খাজারদের একাংশ পোল্যান্ডে অভিবাসন করে এবং সেখান থেকেই পশ্চিমা ইহুদিদের উত্থান ঘটে।
সাধারণ পাঠকের কাছে খাজাররা—যারা সপ্তম থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল— অনেক দূরের, অচেনা এক জাতি বলে মনে হতে পারে। অথচ, যেমনটি কোস্টলার বর্ণনা করেছেন, তাদের ইতিহাস আজও আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে গভীর ও বিস্ময়করভাবে জড়িয়ে আছে।
চার্লেম্যাগন যখন পাশ্চাত্যে সম্রাট, সে সময় খাজারদের প্রভাব বিস্তৃত ছিল কৃষ্ণসাগর থেকে কাস্পিয়ান, ককেশাস থেকে ভলগা নদী পর্যন্ত। মুসলিমদের আক্রমণ যখন বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যকে গ্রাস করার পথে, তখন তাদের থামাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় খাজাররা। পশ্চিম দিকের মুসলিম অগ্রযাত্রা উত্তর আফ্রিকা পেরিয়ে স্পেন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল, আর পূর্ব দিকের এই বিশাল আক্রমণরোধে খাজাররা দাঁড়িয়েছিল ঢালের মতো।
কিন্তু এরপর খাজাররা পড়ে যায় ভয়াবহ এক টানাপোড়েনে—পশ্চিমে বাইজান্টিয়ামের খ্রিস্টান শক্তি আর পূর্বে মুহাম্মদের অনুসারী মুসলিম সাম্রাজ্যের মাঝে। কোস্টলারের মতে, খাজাররা তখনকার যুগের “তৃতীয় শক্তি” ছিল। তারা বেছে নেয় এক অপ্রত্যাশিত পথ—না খ্রিস্টধর্ম, না ইসলাম—বরং ইহুদিধর্মকে গ্রহণ করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।
কোস্টলার খাজারদের চূড়ান্ত নিয়তি নিয়ে নানা সম্ভাবনার আলোচনায় গিয়েছেন, এবং অনুসন্ধান করেছেন আধুনিক ইহুদিদের জাতিগত গঠন ও সামাজিক উত্তরাধিকারে তাদের প্রভাব নিয়ে। তাঁর এই গবেষণাকে বলা যায় সুবিন্যস্ত তথ্যপ্রমাণে সমৃদ্ধ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।