নিহাল উঠে বসল। বলল, ‘আমার এখন ঘুম পাবে না মনঝুমি। তারচেয়ে চলো গল্প করি’।
‘এখন তোমার সাথে আমারও রাত জাগতে হবে?’
‘জাগলে নাহয় একটা রাত।’ ঘাড় কাত করে চাইলো নিহাল। তারপর কবিতার মতো সুর করে বলল, ‘চড়ুই পাখি বারোটা, ডিম পেড়েছে তেরটা। একটা ডিম নষ্ট, চড়ুইপাখির কষ্ট। এই মনঝুমি, তোমার বয়স কত? বয়স ইনটু ৩৬৫ দিলে কত হয়? অতগুলো রাতের মধ্যে একটা রাত নষ্ট হলে, তোমার কষ্ট হবে? চড়ুই পাখির মতো?’
মন ফিসফিসিয়ে বলল, ‘এই একটা রাত নষ্ট না হলে চড়ুই পাখির বাকি জীবনভর আফসোস রয়ে যাবে, বোকা ছেলে!’ মনকে সায় দিলাম না। বললাম, ‘ভাত পচিয়ে মদ-টদ খেলে লোকের নেশা হয় জানতাম। তোমার দেখি ওভারডোজ ভাতেই নেশা লেগে গেছে!’
“নেশা!” একটিমাত্র শব্দ উচ্চারণ করেই নিহাল ধপাস করে গড়িয়ে পড়ল আবার। চোখজোড়া বুজে, বড় একটা শ্বাস ফেলে নিয়ে, যেন বহু পুরনো মন্ত্র জপছে তেমনি ভঙ্গিতে বিড়বিড় করে বলল, ‘এইখানে এই তরুর তলে
তোমার আমার কৌতুহলে
যে কটি দিন কাটিয়ে যাব প্রিয়ে,
সঙ্গে রবে সুরার পাত্র
অল্প কিছু আহার মাত্র
আরেকখানি ছন্দমধুর কাব্য হাতে নিয়ে।’
আমি কেবল চেয়ে চেয়ে দেখলাম। টিসিটির পাগলাটে চুল, আপেল নগরের রাজপুত্রের গোলগাল মুখ, হাসিকুমারের খ্যাপা হাসি-সমস্তটা নিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখলাম পিঞ্জরের খাঁচায়। এবার তুমি যেখানে খুশি যাও রাজপুত্র। ঘুটেকুড়ুনি দাসী এই যে তোমায় বন্দি করে নিলো বুকের ভেতর, ঐটুকুতেই একটা জীবন দিব্যি কেটে যাবে তার। রাজপুত্র সেসব শুনতে পেল না। সে চোখ মেলে তাকিয়ে বলল, ‘মনঝুমি! আমার একটা প্রশ্ন আছে। শুনবে?’