যে জীবন সন্ধ্যা তারায় মিশে যায়, সে তো বিলীন হয় না রাতের আঁধারে,
সে তো আবার ফিরে আসে নতুন সুবহে সাদিকে, নতুন দিবাকর হয়ে।
অস্বীকার করা যায় না—এমন অনেক কিছুই আছে আসমানের নিচে। তবে পৃথিবীর সবচে সত্য ও শতভাগ নিশ্চিত একটি বার্তা, একটি সমাচার। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি প্রাণীই তা অকপটে স্বীকার করে। স্বীকার করতে বাধ্য। শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ, উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, কিষাণ-শ্রমিক সবাই সে দফতরে স্বাক্ষর করেছে।
চিরসত্য সে বার্তা বড়ই নির্দয় আবার বড়ই সদয়। প্রতিটি নাফস সে বার্তা-চিরকুট গলায় বেঁধে চলছে অহর্নিশ। সে তো জীবন সন্ধ্যায় নেমে আসা ঘোর অন্ধকার কিবা আলোক রশ্মি। মাওতের পেয়ালা, মৃত্যুর হাতছানি। সে পেয়ালা কারও জন্য 'মা-আন তাহুরা' আবার কারও জন্য 'মা-আন হামিমা'। কারও কাছে তোহফা সেজে নববধূর বাসর হয়ে আসে, কারও জন্য হয় আবার ভিন্ন কিছু।
কে না চায়—তার শেষ পরিণতি সুন্দর ও সুচারু হোক। পৃথিবীর সবাই চায়। শেষ সময়টা তার ভালো কাটুক, শেষ ফল কল্যাণ বয়ে আনুক, সকলেরি তা মনের বাসনা। মৃত্যুর মতো অমোঘ সত্য আর কিছু নেই। এ মৃত্যুই মুছে দেয় মানুষের সব স্বপ্ন-স্বাধ। নিমিষেই মাটি হয়ে যায়, যত আছে আশা-আহ্লাদ। সে মরণ কাউকে রেহাই দেয়নি, ছাড় পায়নি কোনো প্রাণী।
শুভ পরিণতির এক অন্যতম লক্ষণ, যাঁর গড়া এ পৃথিবী তাঁর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে দুনিয়াকে আল-বিদা বলা। বন্ধুর কদমে লুটে পড়ে তাঁর সান্নিধ্যে যাওয়া, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে; সেজদায় বিলিয়ে 'রফিকে আ'লা'-র সাক্ষাত করার চেয়ে বড় গৌরবের বিষয় আর কী আছে; কতই না সৌভাগ্যবান তাঁরা যার জীবনভর সেজদা করে করে গুজরায়, শেষ ক্ষণেও সে হালতে কাটায়। ওঁদের কাতারে শামিল হতে চাই আমি ও আমরা।
এমন ক'জন মহামানব নিয়ে রচিত 'সেজদায় যাদের মরণ এলো' বইটি। এমন ঈর্ষণীয় শুভ পরিণতির আড়ালে তাদের কোন জিনিস কাজ করেছিল, লেখক শুরুতে সেটারও বিস্তর আলোচনা করেছেন। সেজদায় মৃত্যু-এর মর্মকথা নিয়েও কোরআন সুন্নাহর আলোকে লেখক তাঁর পান্ডিত্ব জাহির করেছেন নিপুণভাবে।