মুসলিম বিশ্বে নিয়তি নির্ধারিত এক ট্র্যাজেডি কাহিনি—কারবালা! এই নিয়ে আখ্যান, উপাখ্যান, কাব্য, পুঁথি, উপন্যাস বিবিধ সাহিত্য শাখা—বহুল সৃজন-কর্মের দৃষ্টান্ত প্রত্যক্ষ করা যায়। বাঙালি মুসলিম মানসে কারবালা কাহিনির চূড়ান্ত পরিণতি অঘোর বেদনা ও বোধের বিষাদ-রূপ সিন্ধু রচনা করে। অমর ঔপন্যাসিক মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’ বাঙালি মননে মাতম শোকের সহজাত প্রবৃত্তির অনুভবে আখ্যান-উপাখ্যানের কাব্যময় গীতভাষে সৃজন করেছে অপার বিস্ময় ও বিশ্বাসের অমৃত ভুবন। কিš‘ এই উপন্যাস ইসলামি ইতিহাসের ঘটনাক্রম অথবা বিন্যাস থেকে অনেকটাই দূরবর্তী—কবির কল্পনা এবং মানসিক ও মানবিক রঞ্জনের আধারে এক বিস্ময়কর রচনা। শিল্প সৃজনে বন্ধুর পথের অভিযাত্রায় আমি অভাজন কল্পনা অথবা রঞ্জনকে মিথ্যা বলিব না—বরং বলিব সত্য-মিথ্যার সহোদরা—সমূহ উৎপাদনের অমৃত ভাণ্ডার! তবুও সত্য বলিব কি? সমকালীন বাঙালি চিন্তাবিদ ও লেখক আহমদ ছফা ক...ত ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ শীর্ষক গ্রš’খানি পঠনকালে এই বোধ ও বিশ্বাসের গৃহপ্রবেশ সম্ভবে।
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে কারবালা কাহিনি যোগে পুঁথি সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ হতে দেখি। কারবালা পুঁথি কারবালার যুদ্ধের ঘটনা অবলম্বনে রচিত কাব্যনিবহ বলেই হয়তো আলোচ্য রচনাবলিকে জঙ্গনামা অভিধায় আখ্যায়িত করা হয়েছে। জঙ্গনামা—পুঁথি সাহিত্যের আদলে রচিত যুদ্ধ বিষয়ক কাব্য—অবয়বে আছে নাট্যের গড়ন। কিš‘ তাতেও অবাধ কল্পনার রঙ একজন নাট্য লিপিকরের দৃষ্টিলোকে প্রত্যক্ষ করি। দোষের কিছু নয় বটে—তবে এসব শিল্পকর্মের সৃজন ইতিহাসের অনুবর্তনে কতটা সত্যাসত্যের দায় বহন করেছে—তাও একবার ভেবে দেখি! শিল্পসত্য অথবা কাব্যসত্যের বাস্তবিক ভুবনে কারবালা কাহিনি হয়তো জঙ্গনামায় শোক মাতমে বিকশিত হয়েছে—ইসলামি পুরাণ ও ইতিহাসের মূল কাহিনি বৃক্ষ শাখা পল্লব পত্রে বিস্তার লাভ করেছে। জঙ্গনামা—বাঙালির জঙ্গম জীবনের নিত্য সহচর হয়ে উঠেছে। কারবালা কাহিনি নিয়ে জারিগান, শোকগাথা, যাত্রাপালা প্রভ...তি রচনা ও পরিবেশনার দৃষ্টান্তও বাংলা ভাষাভাষী জনপদে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।
কারবালার বিষাদাত্মক কাহিনি অবলম্বনে নাটক রচনার প্রয়াস এই প্রথম — এমনটা দাবি সঙ্গত কারণেই করছি না—হয়তো তার প্রয়োজনও নেই। সময়ে নূতন পুরাতনের রূপ পরিগ্রহ করে। কিš‘ পুরাণ ? হয়তোবা কবি অথবা একজন নাট্য লিপিকরের প্রবল স্পর্শে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বক্ষ্যমাণ ‘কারবালা’ নাটক রচনায় আমি এরকমই ভাবছি। আলোচ্য নাটক ইতিহাসের অনুবর্তী হয়েও পুরাণের পঞ্জরে প্রাণাবেগ সঞ্চারে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করছি। বলতে দ্বিধা নেই, ইতিহাসের আধারে নাটক—সুতরাং একেই আমি বলছি নাট্য ইতিবৃত্ত। শিল্প সৃজনে আমি সংশয়ের সীমাকে অতিক্রম করতে চাইছি